ভারতীয় সেনার সম্মানে কেশিয়াড়িতে তিরঙ্গা যাত্রায় হিরণ

শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলার পর থেকেই গোটা দেশ প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছিল। ভারতীয় সেনা পাকিস্তানের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে এই হামলার জবাব…

Hiran Chattopadhyay Leads Tiranga Yatra in Keshiary to Honour Indian Army’s Bravery

শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলার পর থেকেই গোটা দেশ প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছিল। ভারতীয় সেনা পাকিস্তানের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে এই হামলার জবাব দিয়েছে। এই সাফল্যের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন, জঙ্গি দমনে ভারত কঠোর পদক্ষেপ নিতে জানে। এই কৃতিত্বের জন্য ভারতীয় সেনাকে সম্মান জানাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়িতে এক বিশাল তিরঙ্গা যাত্রার (Tiranga Yatra in Keshiary) আয়োজন করা হয়। বেলদা শহরের সিনেমা হল থেকে কেশিয়াড়ি মোড় পর্যন্ত এই মিছিলে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে। মিছিলে অংশ নেন খড়গপুরের বিধায়ক তথা অভিনেতা হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায়, রমাপ্রসাদ গিরি, গৌরীশঙ্কর অধিকারী এবং ভারতীয় সেনার প্রাক্তন জওয়ানরা। এই তিরঙ্গা যাত্রা ছিল দেশের সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সমর্থনের এক জ্বলন্ত প্রকাশ।

হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় মিছিলে অংশ নিয়ে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আহ্বানে সারা দেশের মানুষ পথে নেমেছে। আমরা এই তিরঙ্গা যাত্রার মাধ্যমে ভারতীয় সেনার সাহস ও শক্তির প্রতি আমাদের সমর্থন জানাচ্ছি। পাকিস্তান যদি ভবিষ্যতে এমন কোনো হামলার সাহস করে, তবে তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমি শুধু ভারতীয় জনতা পার্টির কর্মী হিসেবে নয়, একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে এই মিছিলে অংশ নিয়েছি। ভারতীয় সেনার মনোবল বাড়াতে প্রত্যেক ভারতীয়ের উচিত এমন তিরঙ্গা যাত্রায় অংশ নিয়ে তাদের সম্মান জানানো।”

   

এই তিরঙ্গা যাত্রা কেশিয়াড়ি এলাকায় একটি উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি করে। স্থানীয় বাসিন্দারা, যুব সমাজ, এমনকি প্রবীণরাও এই মিছিলে অংশ নিয়ে তাদের দেশপ্রেম প্রকাশ করেন। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা তিরঙ্গা পতাকা হাতে নিয়ে জাতীয় সঙ্গীত ও স্লোগানে মুখরিত করে এলাকা। ‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘জয় হিন্দ’, ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনিতে মিছিলটি একটি শক্তিশালী বার্তা প্রচার করে। মিছিলে অংশ নেওয়া প্রাক্তন সেনা জওয়ানরা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন এবং বর্তমান সেনাদের প্রতি গর্ব প্রকাশ করেন।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা, যিনি স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে দেশপ্রেমের সাক্ষী হয়েছে, এই তিরঙ্গা যাত্রার মাধ্যমে আরেকবার তার দেশভক্তির পরিচয় দিয়েছে। জেলার ইতিহাসে মেদিনীপুরের বিপ্লবী আন্দোলন এবং কৃষক বিদ্রোহের কথা উল্লেখযোগ্য। এই তিরঙ্গা যাত্রা সেই ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি নতুন অধ্যায় রচনা করল।

মিছিলে অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা অমিত মাইতি বলেন, “ভারতীয় সেনার এই সাহসিকতা আমাদের গর্বিত করেছে। আমরা তাদের সমর্থন জানাতে এই মিছিলে এসেছি। এই ধরনের উদ্যোগ আমাদের মধ্যে ঐক্য ও দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলছে।” আরেক অংশগ্রহণকারী, রমাপ্রসাদ গিরি, বলেন, “আমাদের সেনারা দেশের সুরক্ষার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন। তাদের এই কাজের জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ। তিরঙ্গা যাত্রা আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মাধ্যম।”

Advertisements

এই মিছিলে শুধু পুরুষরাই নয়, মহিলা ও শিশুরাও অংশ নিয়েছিল। স্থানীয় স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা তিরঙ্গা পতাকা হাতে নিয়ে মিছিলে হেঁটে তাদের দেশপ্রেম প্রকাশ করে। মিছিল শেষে কেশিয়াড়ি মোড়ে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ভারতীয় সেনার প্রশংসা করেন এবং দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

এই তিরঙ্গা যাত্রা শুধু একটি মিছিলই নয়, বরং ভারতীয় সেনার প্রতি দেশবাসীর অটুট সমর্থন ও বিশ্বাসের প্রতীক। হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই উদ্যোগ কেশিয়াড়ির মানুষের মধ্যে এক নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, “আমাদের সেনারা আমাদের গর্ব। তাদের এই সাফল্য আমাদের সবাইকে একত্রিত করেছে। আগামী দিনে আমরা আরও বেশি সংখ্যায় পথে নামব এবং আমাদের দেশের জন্য কাজ করে যাব।”

এই তিরঙ্গা যাত্রা কেশিয়াড়ি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের মানুষের মধ্যে দেশপ্রেমের এক নতুন অধ্যায় যোগ করেছে। এটি প্রমাণ করে যে ভারতীয় সেনার প্রতি শ্রদ্ধা ও সমর্থন প্রকাশে দেশের প্রতিটি নাগরিক একত্রিত। ভবিষ্যতে এমন উদ্যোগ আরও জোরদারভাবে চলবে বলে আশা করা যায়।