দেশে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে নারী নির্যাতনের ঘটনা (Eve Teasing)। বঙ্গ ভূমিও যে পিছিয়ে নেই তা সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি থেকে প্রায় সবাই ওয়াকিবহাল। কিন্তু তার সঙ্গে আরও একটি ব্যাধি মাথা চাড়া দিয়েছে। তা হল সাম্প্রদায়িকতার ব্যাধি। অতীতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হিংসা এবং তার থেকে তৈরী হওয়া রাজনৈতিক চাপানউতোর উত্তপ্ত করেছে বাংলার পরিবেশ।
ঠিক এরকম ই একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে শিলিগুড়িতে। যেখানে আছে ইভটিজিংয়ের (Eve Teasing)মতো ঘটনা এবং তার সঙ্গে মিশে আছে সাম্প্রদায়িকতার বিষ। শিলিগুড়ির বানেশ্বর এলাকায় গতকাল রাতে এই ঘটনা ঘটেছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় সূত্র এবং হিন্দু ভয়েস এর এক্স-এ পোস্ট করা খবর অনুযায়ী, দুজন মুসলিম যুবক রাস্তায় প্রকাশ্যে হিন্দু মেয়েদের উত্ত্যক্ত ও কটূক্তি করছিল।
এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন এক হিন্দু যুবক। ফরিদ নামে এক ব্যক্তির ছুরির আঘাতে তিনি গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন রাস্তায় বেরিয়ে আসেন, যার ফলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিপুল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং পরিস্থিতি শান্ত করে।
ঘটনার বিবরণ
শিলিগুড়ির বানেশ্বর এলাকায় গতকাল রাতে এই ঘটনা ঘটে। হিন্দু ভয়েস এক্স-এ প্রকাশিত পোস্ট অনুযায়ী, দুজন মুসলিম যুবক রাস্তায় হিন্দু মেয়েদের উদ্দেশে অশালীন মন্তব্য ও উত্ত্যক্ত করছিল(Eve Teasing)। এই ঘটনা দেখে স্থানীয় কয়েকজন হিন্দু যুবক তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এই প্রতিবাদের সময় ফরিদ নামে এক ব্যক্তি ছুরি বের করে একজন যুবকের উপর আক্রমণ করেন এবং তাকে ছুরিকাঘাত করেন। আহত যুবক গুরুতরভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ঘটনার পর স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন, যার ফলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশের হস্তক্ষেপ
ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি বড় দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের উপস্থিতি এবং দ্রুত পদক্ষেপের ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়া থেকে রক্ষা পায়। তবে, এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার বা তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি(Eve Teasing)। পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকে রাস্তায় বেরিয়ে এসে এই ধরনের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে এক্স-এ, এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, শিলিগুড়ির বিভিন্ন এলাকায় ইভটিজিংয়ের (Eve Teasing)ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে, এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে এই ধরনের অপরাধীরা উৎসাহ পাচ্ছে। কেউ কেউ এই ঘটনাকে সম্প্রদায়গত উত্তেজনার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করলেও, পুলিশ এবং স্থানীয় নেতারা সবাইকে শান্ত থাকার এবং সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইভটিজিংয়ের ঘটনা ও সমাজে প্রভাব
ইভটিজিং (Eve Teasing)বা নারীদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনা ভারতের বিভিন্ন স্থানে একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিলিগুড়ির এই ঘটনা এই সমস্যার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। অতীতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিবাদের সময় হিংসার দিকে গড়িয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১২ সালে মুম্বইয়ের ডোম্বিভলিতে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এক যুবককে হত্যা করা হয়েছিল।
একইভাবে, ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ায় এক কলেজ ছাত্র ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এই ঘটনাগুলি প্রমাণ করে যে, ইভটিজিংয়ের মতো অপরাধ শুধু নারীদের নিরাপত্তাই নয়, সমাজের শান্তি ও সম্প্রীতির জন্যও হুমকি।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা শিলিগুড়ির রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অতীতে শিলিগুড়িতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এবং অন্যান্য সংগঠন বিভিন্ন ঘটনায় বিক্ষোভ ও বনধের ডাক দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৫ সালের জুন মাসে মাটিগাড়ায় মাংস বহনকারী একটি গাড়িতে হামলার ঘটনায় ভিএইচপি ২৪ ঘণ্টার বনধ ডেকেছিল।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপি এবং সংঘ পরিবার এই ধরনের ঘটনাকে সম্প্রদায়গত উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করছে। বানেশ্বরের এই ঘটনাও রাজনৈতিক বিতর্কে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
15,000 টাকার কমে সেরা 108MP ক্যামেরা, দুর্দান্ত অফার চলছে এই ফোনগুলিতে
পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা
শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসিপি (পূর্ব) বিশ্বচন্দ্র ঠাকুর জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের যেকোনো প্রচেষ্টাকে কঠোরভাবে দমন করা হবে। পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে এবং জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে। সিপিএম নেতা সমন পাঠক অতীতে এই ধরনের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, পুলিশের আরও সক্রিয় ভূমিকা থাকলে এই ধরনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব হতো।