কাঁথি: তৃণমূল কংগ্রেস নেতা এবং কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরি-র (Suprakash Giri) বিরুদ্ধে বিজেপি নেতা ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী দায়ের করা মানহানি মামলায় শুক্রবার বড় আইনি স্বস্তি মিলল সুপ্রকাশবাবুর। উচ্চ আদালতের বিচারপতি অজয়েন্দ্র নাথ ভট্টাচার্য্য মামলার শুনানির উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছেন এবং পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন ১৪ জানুয়ারি ২০২৬।
প্রসঙ্গত, কাঁথি কো-অপারেটিভ ব্যাংকের পরিচালন কমিটির নির্বাচনের দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন সুপ্রকাশ গিরি। দিব্যেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, ওই মন্তব্যগুলি ছিল “অসম্মানজনক ও মানহানিকর”। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তিনি আদালতে মানহানি মামলা দায়ের করেন।
মামলার নোটিশ হাতে পেয়ে সুপ্রকাশ গিরি আদালতে আবেদন করেন যে, মামলা “গ্রহণযোগ্য নয়” এবং “বিচারযোগ্য নয়”। কিন্তু কাঁথির এ সি জে এম আদালত শুনানির পর মামলাটি গ্রহণ করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রকাশ গিরির আইনজীবী কাঁথির অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট অ্যান্ড সেশন জজ ফার্স্ট কোর্টে রিভিশন আবেদন দাখিল করেন।
সেই সঙ্গে, মামলার মূল বিচার প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ জারির জন্যও আবেদন জানানো হয়। অবশেষে বিচারপতি অজয়েন্দ্র নাথ ভট্টাচার্য্য শুক্রবার নির্দেশ দেন, মূল মামলার শুনানি আগামী বছরের শুরু পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
এই রায়ের ফলে আপাতত দিব্যেন্দু অধিকারীর দায়ের করা মানহানি মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেল। আইনজীবীদের একাংশের মতে, আদালতের এই সিদ্ধান্ত সুপ্রকাশ গিরির পক্ষে বড়সড় স্বস্তি। কারণ মামলাটি আপাতত আর এগোচ্ছে না, এবং পরবর্তী শুনানিতে আদালত সিদ্ধান্ত নেবে মামলাটি আদৌ বিচারযোগ্য কি না।
দিব্যেন্দু অধিকারীর আইনজীবী অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁদের হাতে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে সুপ্রকাশ গিরির মন্তব্য ছিল ব্যক্তিগত মানহানিকর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাঁদের দাবি, মূল শুনানিতে আদালত এই মামলাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।
রাজনৈতিক মহলে এই মামলাকে ঘিরে তীব্র আলোড়ন পড়েছে। শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, “তৃণমূল নেতারা বিরোধীদের নিয়ে ক্রমাগত অপমানজনক মন্তব্য করে যাচ্ছেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এর কোনও স্থান নেই।” অন্যদিকে তৃণমূল শিবিরের দাবি, “সুপ্রকাশ গিরি কেবল রাজনৈতিক বক্তব্য রেখেছিলেন, সেটিকে ইচ্ছাকৃতভাবে বড় করে দেখাচ্ছে বিজেপি।”
রাজনৈতিক উত্তেজনার আবহে এই মামলার চূড়ান্ত পরিণতি কোন দিকে যায়, তা এখন অনেকটাই নির্ভর করছে আগামী বছরের শুরুতে নির্ধারিত আদালতের শুনানির উপর। আপাতত উচ্চ আদালতের নির্দেশে থমকাল মামলার গতি, এবং কিছুটা রেহাই পেলেন সুপ্রকাশ গিরি।