হেমতাবাদ (Hematabad) সীমান্তে (Border) বছরের পর বছর ধরে আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী ‘মিলন মেলা’ (Milon Mela) এবছর বন্ধ (Closed) হয়ে যাওয়ার ফলে মন খারাপ দুই বাংলার মানুষের। এই মেলা প্রাচীন কালীপুজোর পটভূমিতে শুরু হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি হয়ে উঠেছিল দুই দেশের মানুষের মিলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। প্রতি বছর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে, বাংলাদেশের (Bangladesh) পীরগঞ্জ এবং ভারতের উত্তর দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদ ব্লকের চৈনগর পঞ্চায়েতে অনুষ্ঠিত হত এই মেলা, যেখানে কাঁটাতারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে দুদেশের মানুষ নিজেদের প্রিয়জনদের উপহার ছুঁড়ে দিত।
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, সীমানা ভাগ হয়ে যাওয়ার আগে হেমতাবাদ অঞ্চলে এ ধরনের মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হত, যা প্রতিদিনের দুঃখ-কষ্ট ভুলে একদিনের জন্য দুই দেশের মানুষকে কাছাকাছি নিয়ে আসত। একে অন্যের সঙ্গে দেখা হওয়া, কথা বলা, উপহার দেওয়া— এই সব ছিল তাদের জীবনের অমূল্য স্মৃতি। তবে, এবছর বাংলাদেশের পরিস্থিতির উত্তাল অবস্থা এবং প্রশাসনিক নিরাপত্তার কারণে বিএসএফ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর তরফ থেকে মেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে, গ্রামবাসীরা তাদের আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। বছরজুড়ে যে এক দিন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ ছিল, সেটি এখন আর হবে না।’’ তবে, তাদের আশা— পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, আগামী বছরে আবার এই ঐতিহ্যবাহী মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রশাসন জানিয়েছে, সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে এবং বিশেষভাবে ৬ ডিসেম্বর ‘মিলন মেলা’র দিন এলাকায় কড়া নজরদারি চালানো হবে। হেমতাবাদ থানার পুলিশ টহল দিতে থাকবে এবং বিএসএফও নজরদারি বাড়াবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে মানুষকে সচেতন করছেন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মেলার আয়োজনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশাবাদী।
উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের সদস্যা জানান, ‘‘দেশের নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে আমরা সমর্থন জানাই। তবে, গ্রামবাসীরা তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে আবার মিলিত হতে চাইছে, তাই আমরা আশা করছি, আগামী বছরে যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, তাহলে আবার এই মেলা আয়োজিত হবে।’’
এবার মেলা বন্ধ হলেও, দুই বাংলার মানুষের মিলনের এই ঐতিহ্য অনেকেই মনে রেখেছে। তারা আশা করছেন যে আগামীতে দুই দেশের মাঝে শান্তি ফিরলে, এই মিলন মেলা আবার ফিরে আসবে এবং দুই দেশের মানুষ একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়ে আবার আনন্দের সাথে নিজেদের ঐতিহ্যকে উদযাপন করবে।