রাজ্যে টানা বৃষ্টির জেরে ব্যাহত হয়েছে রেল পরিষেবা। নিম্নচাপের কারণে দক্ষিণবঙ্গজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত চলছে। তার প্রভাব পড়েছে হাওড়া ও শিয়ালদহ ডিভিশনের লোকাল ট্রেন (Train) চলাচলেও। অনেক স্টেশনে জমে থাকা জলের কারণে রেললাইন জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এর ফলে বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন চলছে অন্তত ৩০ মিনিট দেরিতে।
বিশেষ করে শিয়ালদহ ডিভিশনের টিটাগড়, বেলঘড়িয়া, গুমা, বারাসত–সহ একাধিক স্টেশনে অটোমেটিক সিগন্যাল ব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়েছে। ফলে রেল চালানো হচ্ছে ম্যানুয়াল প্রসেসে, যার জেরে ট্রেনের গতি হচ্ছে অত্যন্ত ধীর। পরিস্থিতি সামাল দিতে একাধিক জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রেল প্রশাসন।
রেলের নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ:
১. ডিজেল জেনারেটর স্থাপন – বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঠেকাতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলিতে ডিজেল চালিত জেনারেটর বসানো হয়েছে।
২. ট্র্যাকে জল অপসারণের জন্য পাম্প – রেললাইন জলমুক্ত রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাম্প বসানো হয়েছে।
৩. ২৪ ঘণ্টার এমার্জেন্সি কন্ট্রোল সেল – জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিটি বিভাগীয় অফিসারকে নিয়ে একটি কন্ট্রোল সেল চালু রাখা হয়েছে।
৪. আরপিএফ সতর্ক অবস্থায় – নিরাপত্তা জোরদার করতে আরপিএফকে সতর্ক করা হয়েছে এবং ৮০০টি রেইনস্যুট দেওয়া হয়েছে কর্মীদের।
৫. যন্ত্রাংশ রক্ষণাবেক্ষণ – ইলেকট্রিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং সিগন্যাল-টেলিকম বিভাগের সব সরঞ্জামের রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
৬. ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় বিশেষ নজরদারি – ক্যানিং ও ডায়মন্ড হারবারের মতো এলাকাগুলিতে অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।
৭. গাছ কাটার কাজ চলছে – ঝড়-বৃষ্টিতে ট্রেন চলাচলে বাধা যাতে না আসে, সেই কারণে কাঁচড়াপাড়া, ব্যারাকপুর, বহরমপুর, রানাঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় গাছ কাটার কাজ চলছে।
৮. ওভারহেড ইকুইপমেন্ট (OHE) রক্ষণাবেক্ষণ – রেলের ওভারহেড লাইনের রক্ষণাবেক্ষণে জোর দেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় টাওয়ার ওয়াগন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
৯. স্টেশন ছাউনির ব্যবস্থা – যাত্রীদের সুরক্ষায় ২০৪টি স্টেশনে ছাউনি দেওয়া হয়েছে।
১০. লিমিটেড হাইট সাবওয়েতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা – ১২৪টি LHS-এ পর্যাপ্ত ড্রেনেজ রাখা হয়েছে।
১১. রেইন গেজ বসানো হয়েছে – সোনারপুর, বারাসাত, বনগাঁ, রানাঘাট ও ব্যারাকপুরে বৃষ্টির পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য রেইন গেজ বসানো হয়েছে।
১২. অ্যানিমোমিটার বসানো হয়েছে ৯টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় – নামখানা, ডায়মন্ড হারবার, কৃষ্ণনগর, বারাসত, ব্যারাকপুরসহ এলাকাগুলিতে বসানো হয়েছে বাতাসের গতি পরিমাপক যন্ত্র।
দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে রেল পরিষেবার ওপর চাপ। যাত্রাপথে বেরোনোর আগে ট্রেনের সময়সূচি জেনে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে বলে আশ্বস্ত করছে প্রশাসন।