কলকাতা: উল্টোরথের দিনে আকাশের মুখ ভার। সকাল থেকেই দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় শুরু হয়েছে থেমে থেমে বৃষ্টি। কোথাও হালকা, কোথাও আবার একটানা ভারী বর্ষণ। মূলত সক্রিয় মৌসুমী অক্ষরেখার প্রভাবেই এই পরিবর্তন। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মৌসুমী অক্ষরেখা বর্তমানে কলকাতার উপর দিয়ে অতিক্রম করছে, যার জেরে আগামী কয়েক দিন দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এর সঙ্গেই দমকা হাওয়া ও অত্যধিক আর্দ্রতা মানুষের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তুলবে।
কোথায় কোথায় বৃষ্টি?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দক্ষিণবঙ্গের হুগলি, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং ঝাড়গ্রাম এই সাত জেলায় আজ এবং আগামিকাল অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই জেলাগুলির জন্য হলুদ এবং কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মূলত এই বৃষ্টি হয়ে উঠতে পারে জলাবদ্ধতা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাঘাতের কারণ। তাতে উৎসবের ছুটির দিনগুলোতেও স্বস্তিতে ঘোরা-ফেরা করা মুশকিল হয়ে উঠবে অনেকের জন্য। কলকাতা সহ আশপাশের জেলাগুলিতে আজ সকাল থেকেই দফায় দফায় বৃষ্টির দেখা মিলেছে, শহরের কিছু এলাকায় ইতিমধ্যেই জল জমে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ এবং বীরভূমেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে মৌসম ভবন। এই পরিস্থিতিতে প্রবল বৃষ্টির সময় বাইক বা স্কুটিতে রাস্তায় না নামার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে জলমগ্ন রাস্তায়।
দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা কিছুটা কম Heavy Rain in Ulta Rath South Bengal
আবহাওয়ার এই আচমকা পরিবর্তনের ফলে দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও, আর্দ্রতার কারণে অস্বস্তি থেকেই যাবে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ এতটাই বেশি যে শহরের মধ্যে বা লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করা মানুষেরা রীতিমতো ঘামতে ঘামতে হাঁপিয়ে উঠছেন। আবহাওয়া দফতরের মতে, মঙ্গলবার থেকে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমবে। তবে একেবারে বন্ধ হবে না-বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি চলবেই। তাই এখনই ছাতা গুছিয়ে তুলে রাখার সময় নয়।
উত্তরে বৃষ্টি
এই মুহূর্তে রাজ্যের অন্য প্রান্ত উত্তরবঙ্গেও বর্ষার ছায়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যদিও আজ ও আগামীকাল সেভাবে বড়সড় বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই, কিন্তু সোমবার থেকে ফের শুরু হবে বর্ষার দাপট। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি এই পাঁচ জেলায় টানা সাত দিন বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। পাহাড়ি এলাকাগুলিতে অতিবৃষ্টির কারণে ধসের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের কিছু পর্যটনস্থলে সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে।
সব মিলিয়ে রাজ্যজুড়ে বর্ষা এখন পুরোপুরি সক্রিয়। একদিকে উৎসব, অন্যদিকে প্রাকৃতিক অবস্থার এমন আচরণ অনেকের পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছে। তবে বৃষ্টির দিক থেকেও তো বাঙালির একটা আলাদা টান থাকে চা, পাকোড়া, জানালার পাশে বসে ভিজে শহর দেখা। কিন্তু প্রশাসনের একটাই অনুরোধ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বেরোনো, বৃষ্টির সময় বৈদ্যুতিক খুঁটি বা গাছের নিচে না দাঁড়ানো, এবং জল জমে থাকা রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন।
আপাতত রাজ্যের একদিকে রথের আনন্দ, অন্যদিকে বৃষ্টির চোখরাঙানি। ছাতা-জলজন্তু নিয়েই তাই এই সপ্তাহের দিনগুলি কাটাতে চলেছে বাংলা।