ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত আলোকনগরী! নিরাপত্তার জন্য খুলে ফেলা হচ্ছে বড় বড় পুজোর তোরণ

চন্দননগর: ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অন্ধ্র উপকূলে আছড়ে পড়তেই তার প্রভাব এসে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। রাজ্যের একাধিক জেলায় সকাল থেকেই বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার দাপট চলছে। বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি জনজীবন ব্যাহত করছে। তারই মধ্যে চলছে চন্দননগরের ঐতিহ্যবাহী জগদ্ধাত্রী পুজো (Chandannagar Jaghadhatri Puja), যেখানে উৎসবের আবহে এখন যোগ হয়েছে আবহাওয়ার ভ্রুকুটি।

Advertisements

আলোর শহর হিসেবে পরিচিত চন্দননগর এখন সাজানো আলোয় ঝলমল করছে, কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটে যায় একটি বড় দুর্ঘটনা। কানাইলালপল্লির ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় জগদ্ধাত্রী পুজো’ মণ্ডপ হাওয়ার দমকে ভেঙে পড়ে। প্রায় ৭০ ফুট উঁচু কাঠামোটি ধসে পড়ায় আহত হন বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী। এর পর থেকেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য বারোয়ারী পুজো কমিটিগুলির মধ্যে।

   

বুধবার সকাল থেকে প্রশাসনের নির্দেশে চন্দননগরের একাধিক বড় বড় বারোয়ারী তাদের আলোর তোরণ খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানা গেছে, প্রচণ্ড হাওয়া ও বৃষ্টির ফলে বেশ কয়েকটি স্থানে আলোর গেট দুলতে শুরু করেছিল। নিরাপত্তার খাতিরে সেই তোরণগুলি খুলে ফেলার কাজ চলছে জোরকদমে।

চন্দননগর কেন্দ্রীয় পূজা কমিটির এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা চাই না উৎসবের আনন্দের মধ্যে কোনও দুর্ঘটনা ঘটুক। তাই প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেই তোরণ ও আলোর কাঠামো খুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দর্শনার্থীদের সুরক্ষাই এখন প্রথম অগ্রাধিকার।”

শহরের মধ্যাঞ্চল, বড়বাজার, বাগবাজার, বন্দঘাটের মতো প্রধান এলাকাগুলিতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু তোরণ ভেঙে ফেলা হয়েছে। প্রশাসনও চন্দননগর পুর এলাকা জুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ ও দমকল বাহিনী মোতায়েন করেছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যরাও প্রস্তুত রয়েছে।

Advertisements

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, “এখনই যদি বৃষ্টি ও হাওয়া এমন থাকে, নবমীর রাতে আরও বিপদ হতে পারে। ভালো হয়েছে প্রশাসন আগে থেকেই পদক্ষেপ নিয়েছে।”

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি চলতে পারে। এর ফলে জগদ্ধাত্রী পুজোর ভিড়ে সামান্য বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারা। তবে চন্দননগরবাসীর উচ্ছ্বাসে কোনও ভাঁজ পড়েনি। উৎসবের আমেজ বজায় রেখেই তাঁরা বলছেন, “জগদ্ধাত্রী মা আছেন, সব ঠিক হবে।”

পুজোর শেষ দুই দিন — অষ্টমী ও নবমী — শহরে রেকর্ড দর্শনার্থীর সম্ভাবনা থাকায় প্রশাসন ও পুজো উদ্যোক্তারা চাইছেন, উৎসবের আনন্দের পাশাপাশি নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত থাকে। তাই এখন চন্দননগরের প্রতিটি পুজোমণ্ডপে দেখা যাচ্ছে সচেতনতার আলাদা ছবি — আলোর মাঝে নিরাপত্তার আলো জ্বলছে সমানভাবে।