চাকরি নয়, যেন নিলাম! হলদিয়া বন্দরে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ অভিযোগ

haldia-port-guard-appointments-trigger-cash-for-job-controversy

হলদিয়া বন্দরে (Haldia) রক্ষী নিয়োগকে ঘিরে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগের প্যানেল তৈরি করা হয়েছে এবং এর পিছনে শাসকদল ঘনিষ্ঠ এক লবির প্রভাব কাজ করছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে হলদিয়া-কলকাতা পোর্ট এলাকার শ্রমিক মহল।

Advertisements

হলদিয়া ডক কমপ্লেক্সের তরফে সম্প্রতি রক্ষী নিয়োগের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, মোট ২০টি পদে নিয়োগ করা হবে, যার মধ্যে ১০টি পদ সংরক্ষিত রয়েছে মহিলা রক্ষীদের জন্য। এই নিয়োগের উদ্দেশ্য ছিল বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করা এবং স্থানীয় কর্মপ্রার্থীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া। কিন্তু সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েই শুরু হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ।

অভিযোগের সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রার্থী প্রতি ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই অর্থের বিনিময়ে তৈরি করা হয়েছে রক্ষী নিয়োগের একটি বিশেষ “প্যানেল”, যেখানে স্থানীয়দের বাদ দিয়ে বহিরাগতদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে হলদিয়া অঞ্চলের বহু বেকার যুবক–যুবতী সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবি উঠেছে।

এই অভিযোগ তুলেছে হলদিয়া-কলকাতা পোর্ট অ্যান্ড ডক শ্রমিক ইউনিয়ন (ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ)। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার ঘাটতি স্পষ্ট। প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়া হচ্ছে, অথচ স্থানীয়দের উপেক্ষা করে অন্য জেলার প্রার্থীদের বাছাই করা হচ্ছে। এটি শুধু অনৈতিক নয়, বেআইনিও।” সংগঠনের দাবি, অবিলম্বে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুন করে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নিয়োগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

Advertisements

বন্দরের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি হলদিয়া ডক কমপ্লেক্সে নিরাপত্তা পরিষেবার চাহিদা বেড়েছে। বন্দরের বিস্তৃতি, মালপত্র ওঠানামার পরিমাণ, এবং সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কিছু ঘটনাকে সামনে রেখেই নতুন করে রক্ষী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রক্রিয়াই এখন বিতর্কে জড়িয়েছে।

অভিযোগ অনুযায়ী, এই নিয়োগে রাজ্যের শাসকদল ঘনিষ্ঠ একদল ঠিকাদার এবং প্রভাবশালী স্থানীয় নেতা প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারা নাকি প্রার্থীদের থেকে ঘুষ নিয়ে প্যানেলে নাম তুলছেন। স্থানীয়দের মধ্যে এই নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, “বন্দর আমাদের এলাকার প্রাণকেন্দ্র। অথচ চাকরি পাচ্ছে বাইরের মানুষ। আমরা বারবার আবেদন জানিয়েও উপেক্ষিত।”

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হলদিয়া-কলকাতা পোর্ট অ্যান্ড ডক শ্রমিক ইউনিয়ন কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যানের কাছে একটি লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে। সেই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “যতক্ষণ না স্বচ্ছ তদন্ত সম্পূর্ণ হচ্ছে, ততক্ষণ এই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে হবে।” পাশাপাশি, নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত নথি এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবিও জানিয়েছে ইউনিয়ন।