শ্মশানঘাটে মায়ের মরদেহের সামনে মালাবদল করে বিয়ে সারলেন মেয়ে

আনন্দ খুনসুটির লেশমাত্র নেই। জনা কয়েক কনেযাত্রীদের চোখে জল। ছাদনাতলার বদলে বর-কনের চারহাত এক হল শ্মশানে! এ এক আজব বিয়ে! তবে, এ বিয়ের নেপথ্যে রয়েছে…

girl got married in front of her mother-s dead body in crematorium at Guskara, গুসকরায় শ্মশানঘাটে মায়ের মরদেহের সামনে মালাবদল করে বিয়ে সারলেন মেয়ে

আনন্দ খুনসুটির লেশমাত্র নেই। জনা কয়েক কনেযাত্রীদের চোখে জল। ছাদনাতলার বদলে বর-কনের চারহাত এক হল শ্মশানে! এ এক আজব বিয়ে! তবে, এ বিয়ের নেপথ্যে রয়েছে এক বেদাতুর কাহিনী। সঙ্গে রয়েছে সদ্য মাতৃহারা মেয়ের তাঁর মায়ের ইচ্ছাপূরণের বিষয়টিও। মায়ের মরদেহের সামনে শ্মশানঘাটেই মালাবদল সারেন মেয়ে। আর মালাবদল পর্ব শেষ হতেই প্রেমিকার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেন প্রেমিক। এই ঘটনা পূর্ব-বর্ধমানের গুসকরার রটন্তীকালী মন্দির সংলগ্ন শ্মশানের।

কনে তরুণী পল্লবী মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি গুসকরা শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ পল্লিতে। পল্লবীর বাবা ভবানী মুখোপাধ্যায় পেশায় ব্যবসায়ী। তাঁর ওষুধের দোকান রয়েছে। মা নিলীমাদেবী ও বাবা ভবানীবাবুর একমাত্র সন্তান পল্লবী। স্নাতক উত্তীর্ণ পল্লবী কলকাতায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তাই তাঁকে কলকাতাতেই থাকতে হয়।

   

ভাতারের বেরোয়া গ্রাম নিবাসী জয়দীপের সঙ্গে কয়েক বছর আগে থেকেই পল্লবীর প্রেমের সম্পর্ক। দু’জনের পরিবারই বিষয়টি জানতো। পল্লবী ও জয়দীপ বিয়ে করবেন বলেও ঠিক ছিল। তবে পল্লবী বিয়ে নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চাইছিলেন না। তবে নিলীমাদেবী চাইতেন তাঁর মেয়ে তাড়াতাড়ি বিয়ে করুক।

নির্জলা হাওড়া পুর এলাকা! শনিবার বারবেলা থেকে টানা ১৮ ঘন্টা

পরিবার সূত্রে খবর, বুধবার পল্লবীর মা নিলীমাদেবী বাড়িতে একাই ছিলেন। এক ফাঁকে নিলীমাদেবী আত্মঘাতী হন। তাঁর স্বামী ভবানী মুখোপাধ্যায় বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে মৃত অবস্থায় দেখে পুলিশে খবর দেন। গুসকরা ফাঁড়ির পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। ময়নাতদন্ত করে দেহ ফিরলে ওই দিন রাতে নিলীমাদেবীর দেহ গুসকরা শহরে রটন্তীকালী শ্মশানে দাহ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

নিলীমাদেবী চেয়েছিলেন তাঁর একমাত্র মেয়ের বিয়ে দ্রুত হয়ে যাক। এই ইচ্ছে প্রায়ই প্রকাশ করতেন তিনি। তাই মায়ের সেই ইচ্ছা পূরণ না করে মায়ের দেহ সৎকার করার বিষয়টি পল্লবী মন থেকে মেনে নিতে পারছিলেন না। ফলে বুধবার রাতে শ্মশানে মায়ের দেহ সৎকার করার আগে মেয়ে পল্লবী তাঁর মায়ের মৃতদেহের সামনেই প্রেমিক জয়দীপের গলায় মালা পড়িয়ে দেন। জয়দীপ তাঁর প্রেমিকার সিঁথিতে পরিয়ে দেন সিঁদুর।

শ্মশানে হাজির জয়দীপের বাবা মলয়বাবুর কথায়, ‘বিয়েটা অন্যরকম ভাবে হল বলে অনেকে অবাক হচ্ছেন। তবে মায়ের ইচ্ছা পূরণের জন্যে মেয়ে পল্লবী যে দৃষ্টান্ত তৈরি করল তা মায়ের প্রতি সন্তানের ভক্তিরই প্রকাশ। এটা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ পরে ছেলের বিয়ে উপলক্ষ্যে একটা অনুষ্ঠান করবেন বলেও জানিয়েছেন মলয়বাবু।