কেন্দ্রের বঞ্চনায় থমকে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান, উদ্যোগ নিল রাজ্য

ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের (Ghatal Masterplan) বাস্তবায়ন নিয়ে ফের সরগরম রাজনৈতিক অঙ্গন। সোমবার কলকাতা হাই কোর্টে হলফনামা দিয়ে রাজ্য সরকার স্পষ্ট জানাল, কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক বঞ্চনার কারণেই…

Kolkata High Court suicide attempt

ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের (Ghatal Masterplan) বাস্তবায়ন নিয়ে ফের সরগরম রাজনৈতিক অঙ্গন। সোমবার কলকাতা হাই কোর্টে হলফনামা দিয়ে রাজ্য সরকার স্পষ্ট জানাল, কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক বঞ্চনার কারণেই এতদিন অগ্রগতি হয়নি এই প্রকল্পের। রাজ্য এখন নিজেদের উদ্যোগে কাজ শুরু করেছে। বিচারপতি সুজয় পালের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে পক্ষভুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে ফের এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।

ঘাটাল উপত্যকা মূলত শীলাবতী, কংসাবতী ও দ্বারকেশ্বর নদীর শাখা নদী ঝুমির লীলাভূমি হিসাবে পরিচিত। ঔপনিবেশিক আমলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জেরে স্থানীয় ভূস্বামীরা সার্কিট বাঁধ নির্মাণ করেন। উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের জমিদারিতে নিচু জমিকে বন্যার জল থেকে রক্ষা করে আবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করা। কিন্তু জমিদারি ব্যবস্থা উঠে গেলেও সেই বাঁধগুলি আজও রয়ে গিয়েছে। বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাঁধগুলি ভেঙে পড়ছে। ফলত, প্রতি বছর বর্ষার মরশুমে ঘাটাল ও তার আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।

   

অন্যদিকে, জোয়ারের সঙ্গে আসা পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বাঁধের কারণে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় নদীর জলধারণ ক্ষমতা দ্রুত কমছে। এর ফলেই ঘাটালের বন্যা সমস্যার প্রকোপ প্রতি বছর বেড়েই চলেছে।

এই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সমাধান করতেই ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের ভাবনা। নদী বাঁধগুলির সংস্কার, খাল ও নদীর খনন, নতুন সার্কিট বাঁধের উন্নয়ন এবং সেচব্যবস্থা আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে এই প্রকল্পে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঘাটালবাসীকে আর ফি বছর জলবন্দি অবস্থায় থাকতে হবে না।

কিন্তু অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদান না মেলায় প্রকল্পটি বহু বছর ধরে ঝুলে রয়েছে। রাজ্যের দাবি, প্রায় ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন।

Advertisements

চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরামবাগে জনসভায় ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দেবকে পাশে বসিয়ে আশ্বাস দেন, কেন্দ্র টাকা না দিলেও রাজ্য সরকার নিজেদের উদ্যোগে এই প্রকল্প সম্পন্ন করবে। দেব নিজেও দীর্ঘদিন ধরে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের বাস্তবায়নের দাবিতে সরব ছিলেন। তাঁর সেই ‘আবদার’ মেনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্যের তরফে প্রয়োজনীয় টাকা বরাদ্দ করা হবে।

বর্তমানে সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ধাপে ধাপে কাজ এগোচ্ছে। ইতিমধ্যেই কিছু বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে নদীর পলি অপসারণ ও খাল সংস্কারের কাজও চলছে। তবে পুরো প্রকল্প শেষ হতে আরও সময় লাগবে বলেই জানানো হচ্ছে।

ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোরও চলছে সমান তালে। তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, কেন্দ্র ইচ্ছে করেই বাংলার এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে সাহায্য করছে না। অন্যদিকে, বিজেপি শিবিরের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করে রাজ্য নিজেদের প্রশাসনিক ব্যর্থতাকে ঢাকতে চাইছে।

যাই হোক, বহু প্রতীক্ষিত এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে বলে আশাবাদী স্থানীয় মানুষ। প্রতিবার বর্ষায় ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া বন্যা, জমির ফসল নষ্ট হওয়া এবং দৈনন্দিন জীবনের চরম দুরবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার স্বপ্ন এখন জাগছে ঘাটালবাসীর মনে।