জলমগ্ন ঘাটাল ঘিরে চড়ছে পারদ, মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কী বলছে রাজ্য

বর্ষার আগমনে আবারও পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে উঠেছে। চারদিকে শুধুই জলের প্রলেপ, গ্রামবাসীদের জীবন অসহায়তার মধ্যে কাটছে। এই পরিস্থিতি বদলাতে রাজ্য সরকার দীর্ঘদিন…

Ghatal Flood Crisis: West Bengal Advances Ghatal Master Plan Amid Political Clash

বর্ষার আগমনে আবারও পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে উঠেছে। চারদিকে শুধুই জলের প্রলেপ, গ্রামবাসীদের জীবন অসহায়তার মধ্যে কাটছে। এই পরিস্থিতি বদলাতে রাজ্য সরকার দীর্ঘদিন ধরে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান (Ghatal Master Plan) নিয়ে কাজ করছে, তবে এর বাস্তবায়ন নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ও ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরাসরি সংঘর্ষে রয়েছে। গত লোকসভা ভোটে তৃণমূল নেতাদের দেওয়া আশ্বাসের দায় তুলে ধরে বিজেপি তীব্র কটাক্ষ করছে, আবার তৃণমূল কেন্দ্রীয় সরকারের গাফিলতি দেখিয়ে পালটা আক্রমণ চালাচ্ছে। এই রাজনৈতিক হাওয়া গরম হওয়ার মাঝে রাজ্য সরকারের সেচ ও জলপথ বিভাগ একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে পরিস্থিতি পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছে।

Read Hindi: जलमग्न घाटाल में बढ़ रहा पारा, मास्टर प्लान पर क्या कह रही है राज्य सरकार?

   

ঘাটালের জলবায়ু: একটি চেনা দৃশ্য
বর্ষার প্রতিটি মৌসুমে ঘাটালের জনগণ জলের ভয়াবহতার সম্মুখীন হয়। শিলাবতী, কাঁসাই, তমাল নদীসমূহের পানি অতিক্রম করে চারদিক জলাবদ্ধ করে দেয়। এই অঞ্চলের ভৌগোলিক গঠন এবং নিম্নভূমির কারণে বন্যা প্রতি বছরই একটি স্বাভাবিক ঘটনা। ২০১৩ সালের ‘ফেইলিন’ ঘূর্ণিঝড়ের পর এই এলাকায় বড় ধরনের জলাবদ্ধতা দেখা গিয়েছিল, যা স্থানীয় জনজীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। এই পরিস্থিতি দূর করতে ১৯৫৯ সালে প্রথম ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কথা উত্থাপন করা হয়েছিল, তবে বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটেছে।

মাস্টার প্ল্যানের পটভূমি
রাজ্য সরকারের সেচ ও জলপথ বিভাগের প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান পশ্চিম ও পূর্ব মেদিনীপুরের ৬৫৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে বন্যা থেকে রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি পশ্চিম মেদিনীপুরের ৮টি ব্লক ও ২টি পৌরসভাকে কভার করে। ২০১৪ সালে ভারত সরকারের জলশক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঙ্গা বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশন (GFCC) কাছে ১২১২ কোটি টাকার বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদন (DPR) জমা দেওয়া হয়েছিল। ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ১২৩৮.৯৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের অনুমোদন দেয়, তবে আর্থিক সহায়তা প্রদানে বিলম্ব ঘটেছে।

Advertisements

কেন্দ্রের গাফিলতি ও রাজ্যের পদক্ষেপ
তৃণমূল সরকারের দাবি, গত ১১ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার একটি পয়সাও সহায়তা দেয়নি। ফলে, রাজ্য নিজস্ব বাজেট থেকে ২০১৮-২০২১ অব্ধিতে ১১৫.৮০ কিলোমিটার নদী পুনঃখনন কাজ শেষ করে, যার খরচ ৩৪১.৪৯ কোটি টাকা। এছাড়া, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমানে প্রকল্পের বাকি অংশ বাস্তবায়নের জন্য ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, এবং ২০২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫টি স্লুইস নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে, যার অগ্রগতি ৬০-৭০%। চন্দ্রেশ্বর খালের খনন কাজ প্রায় শেষ হয়েছে।

রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
বিজেপি তৃণমূলের উপর অভিযোগ করে বলছে, লোকসভা ভোটে আশ্বাস দেওয়া হলেও কাজ এগোয়নি। বিজেপি নেতা সুবেন্দু অধিকারী জানান, “ঘাটালের MLA-কে কমিটিতে রাখা হয়নি, এটা স্পষ্ট নেতৃত্বের ব্যর্থতা।” তৃণমূল পালটা বলছে, কেন্দ্রের অবহেলনার জন্য এই পরিস্থিতি। রাজ্যের সেচ ও জলপথ মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুইয়া জানান, “কেন্দ্রের সহায়তা না পেলেও আমরা নিজেদের বাজেটে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।”

জনগণের অবস্থা
ঘাটালের বাসিন্দারা জলাবদ্ধতায় পড়ে আর্থিক ক্ষতি বহন করছেন। একজন স্থানীয় বলেন, “প্রতি বছর জল এসে ফসল ধ্বংস করে। মাস্টার প্ল্যান কখন শেষ হবে, কেউ বলতে পারছে না।” তবে, সরকারের দাবি, ২০২৭ মার্চের মধ্যে প্রকল্প শেষ হলে বন্যা নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হবে।
ঘাটালের জনগণের জীবন উন্নত করার জন্য মাস্টার প্ল্যান গুরুত্বপূর্ণ, তবে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এর বাস্তবায়নে বাধা হচ্ছে। রাজ্যের প্রতিশ্রুতি পূরণ হয় কিনা, তা আগামী দিনে পরিষ্কার হবে।