অবৈধভাবে টাকা তোলার অভিযোগে গ্রেফতার তৃণমূল কাউন্সিলর

শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এক চিঠি ঘিরে তোলপাড় ঘাটাল শহর। সোমবার সন্ধ্যা থেকেই অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসিয়াল প্যাডে লেখা একটি চিঠি ছড়িয়ে পড়তে থাকে সমাজ মাধ্যমে। অভিযোগ উঠেছে, সেই চিঠিকে হাতিয়ার করে ঘাটাল পুরসভার (Ghatal Municipality Scam) প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বর্তমান কাউন্সিলর বিভাস ঘোষ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা আদায় করছিলেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সকালে তাঁকে গ্রেফতার করে ঘাটাল থানার পুলিশ।

Advertisements

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল পৌর এলাকার এক ব্যক্তি পুলিশে অভিযোগ জানান, তাঁর কাছ থেকে বিভাস ঘোষ ৫ লক্ষ টাকা নিয়েছেন একটি সরকারি প্রকল্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। অভিযোগ পাওয়ার পরই পুলিশ তৎপর হয়। প্রথমে বিভাস ঘোষকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, কিন্তু তাঁর বয়ানে অসঙ্গতি ধরা পড়ায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।

   

বর্তমানে তিনি ঘাটাল পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। পুলিশ সূত্রে খবর, বিভাস ঘোষের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি তৃণমূলের নামাঙ্কিত প্যাড, যেখানে ভুয়ো স্বাক্ষর ও সিলমোহর ব্যবহার করা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, চিঠিটি ভুয়ো এবং তা দিয়ে একাধিক ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অর্থ নেওয়া হয়েছিল।

ঘাটাল সাংগঠনিক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “আমরা মনে করছি, কোনও অসৎ চক্রের প্রভাবে বিভাস ঘোষ ভুল পথে গেছে। ভূয়ো প্যাড ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। আইন অনুযায়ী পুলিশ তদন্ত করছে, দল তার সঙ্গে নেই।” তিনি আরও জানান, “দলের কোনও অফিসিয়াল প্যাড ব্যবহার করতে গেলে তা অনুমোদিত হতে হয়, এখানে সেই অনুমোদন ছিল না।”

Advertisements

অন্যদিকে, ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে বলেন, “এই ঘটনা প্রমাণ করে, তৃণমূলের নেতারা দুর্নীতির স্রোতে ডুবে আছে। বিভাস ঘোষকে গ্রেফতার করায় আমরা খুশি। তবে পুলিশের উচিত বাকি তৃণমূল নেতাদেরও ধরপাকড় করা, যারা ঘাটালে অবৈধভাবে টাকা তুলছে— কেউ ঘর দেওয়ার নামে, কেউ চাকরি দেওয়ার নামে। আমরা আগেই বলেছি, ‘তৃণমূল মানেই চোর, চোর মানেই তৃণমূল।’”

ঘাটাল থানার এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, “চিঠিটি ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তদন্তে আরও কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আরও গ্রেফতার হতে পারে।” পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, চিঠিতে তৃণমূল নেতৃত্বের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সংস্থা থেকে তহবিল আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপে প্রতারণার এই চক্রটি ফাঁস হয়ে যায়।

ঘাটাল পৌরসভা ও স্থানীয় রাজনীতিতে এই ঘটনাকে ঘিরে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে চাপানউতোর— একদিকে শাসক দল প্রতারণার অভিযোগ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত, অন্যদিকে বিরোধীরা এই ঘটনাকে তৃণমূলের “দুর্নীতির উদাহরণ” বলে তুলে ধরছে। বর্তমানে বিভাস ঘোষকে আদালতে তোলা হয়েছে এবং তাঁকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে।