সিউড়ি: ঘটনাটা শুনলেই মনে হবে যেন কোনও ক্রাইম থ্রিলারের চিত্রনাট্য। একদিকে ধর্মীয় আবহ, অন্যদিকে সেই আবরণ ব্যবহার করেই গাঁজা (Ganja) পাচারের চক্রান্ত। বীরভূমের রামপুরহাটে ধরা পড়ল এমনই অভিনব গাঁজা পাচারচক্র। অভিযুক্ত তিন দুষ্কৃতীর মধ্যে দু’জন স্থানীয় এবং একজন বাইরের রাজ্যের বাসিন্দা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বহরমপুর থেকে সিউড়ি হয়ে ঝাড়খণ্ডগামী একটি বাসে চেপে আসে তিন পাচারকারী। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রামপুরহাট থানার পুলিশ তৎপর হয়ে অভিযান চালিয়ে বাস থামিয়ে ওই তিনজনকে আটক করে। তাঁদের ব্যাগ তল্লাশি করে দেখা যায়, ঠাকুরের ছবির পিছনে গাঁজা (Ganja) লুকোনো রয়েছে।
একাধিক ঠাকুরের ছবি ভর্তি ব্যাগ পাওয়া গেছে। সেইসব ছবির পিছনে গাঁজা (Ganja) স্তরে স্তরে রাখা ছিল। পুলিশের অনুমান, এই গাঁজা ঝাড়খণ্ডে পাচার করা হচ্ছিল। কারণ কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু হচ্ছে ঝাড়খণ্ডের বিখ্যাত শ্রাবণী মেলা। সারা দেশ থেকে হাজার হাজার সাধু-সন্ত সেখানে জড়ো হন, যাঁদের মধ্যে অনেকেই গাঁজা সেবন করে থাকেন। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই ওই এলাকায় গাঁজা ছড়ানোর পরিকল্পনা ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা গাঁজাকে (Ganja) লুকোতে ঠাকুরের ছবিকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিল। সাধারণত এই ধরনের ব্যাগে কেউ সন্দেহ করে না। সেই সুযোগেই পাচারকারীরা চালান চালাতে চাইছিল।’’
এই ধরনের অভিনব পদ্ধতি ইঙ্গিত দেয় যে পাচারকারী চক্রটি দীর্ঘদিন ধরেই পরিকল্পিতভাবে এই কাজ চালিয়ে আসছে। ধৃতদের মধ্যে দু’জনের বাড়ি রামপুরহাটের কাছাকাছি হলেও একজন বহরমপুরের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে।
বীরভূমের পুলিশ সুপার আমনদীপ জানিয়েছেন, ‘‘আমরা বহরমপুর-ঝাড়খণ্ড রুটে নজরদারি আরও বাড়িয়েছি। রামপুরহাট থানার পুলিশ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। ধৃতদের কাছ থেকে প্রচুর গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, মাত্র কয়েকদিন আগেই নলহাটি থানা এলাকায় ঝাড়খণ্ডগামী একটি বাস থেকে প্রায় ২২.৫ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছিল পুলিশ। সেই ঘটনায় ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা নিয়াজ শেখ গ্রেপ্তার হয়। এর রেশ কাটতে না কাটতেই ফের রামপুরহাটে গাঁজা পাচারের আরেক ঘটনা সামনে এলো।
পুলিশ জানতে চেষ্টা করছে এই পাচারের সঙ্গে বড় কোনও মাফিয়া চক্র জড়িত কি না। পাশাপাশি, ঝাড়খণ্ডে শ্রাবণী মেলা কেন্দ্রিক চাহিদা মাথায় রেখেই কি এই সময়কে টার্গেট করা হয়েছে— তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
একদিকে ধর্মীয় উৎসবের আবহ, অন্যদিকে তার আড়ালে অবৈধ মাদক পাচারের চেষ্টা। বীরভূম পুলিশের তৎপরতায় সেই চক্রান্ত ভেস্তে গেল। তবে এই ঘটনার পর পুলিশ আরও সতর্ক হয়েছে বহরমপুর-ঝাড়খণ্ড সংযোগকারী রুটে। আবারও প্রমাণ হল, অপরাধীরা যতই অভিনব কৌশল নিক, পুলিশও ততটাই প্রস্তুত।