নিজস্ব সংবাদদাতা, খড়গপুর: ১ আগস্ট থেকে নতুন অধ্যায় শুরু হল খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের পরিষেবায়। এবার থেকে হাসপাতাল চত্বরে চালু হল বিনামূল্যে সিটি স্ক্যান পরিষেবা (Free CT Scan Services), যা রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার মানোন্নয়নে এক বড় পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে উপকৃত হবেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলাগুলির বহু রোগী।
এই পরিষেবা চালু হওয়ার ফলে খুশি এলাকাবাসী। আগে যেখানে সাধারণ মানুষের বহু অর্থ ব্যয় করে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিটি স্ক্যান করতে হত, সেখানে এখন রাজ্যের উদ্যোগে তা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাচ্ছেন তাঁরা।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী জানিয়েছেন, এই পরিষেবা PPP (Public-Private Partnership) মডেলে চালু করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের এই প্রকল্পের অধীনে অত্যাধুনিক ৮০-স্লাইস সিটি স্ক্যান মেশিন বসানো হয়েছে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে। এই ধরনের হাই-রেজোলিউশন মেশিন সাধারণত বড় মেডিক্যাল কলেজ বা প্রাইভেট হেলথ ইউনিটেই দেখা যায়।
হাসপাতালের সুপার ডাঃ গৌতম মাইতি জানিয়েছেন, ‘‘এই সিটি স্ক্যান পরিষেবা না থাকার ফলে এতদিন বহু আশঙ্কাজনক রোগীকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে রেফার করতে হত। ফলে সময় নষ্ট হত এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা আরও জটিল হয়ে উঠত। এখন এই পরিষেবা চালু হওয়ায় দ্রুত রোগ নির্ণয় সম্ভব হবে এবং অনেক জীবন বাঁচানো যাবে।’’
এই পরিষেবার অংশীদার সংস্থা সুরক্ষা ডায়াগনস্টিকস। সংস্থার চেয়ারম্যান ডাঃ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, “আমরা দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের সঙ্গে একত্রে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিচ্ছি। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যাতে প্রতিটি রোগী সর্বোচ্চ মানের পরিষেবা পান।”
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শুধু হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরা নয়, আউটডোরে আসা রোগীরাও এই সিটি স্ক্যান সুবিধা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাবেন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক রোগীকে এই পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যার জন্য আগে থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
এখনও পর্যন্ত রাজ্যের খুব কম সাব-ডিভিশনাল হাসপাতালে এত উন্নতমানের সিটি স্ক্যান মেশিন বসানো হয়েছে। খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে এই যন্ত্র বসানো নিঃসন্দেহে গোটা দক্ষিণবঙ্গের জন্য একটি আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ।
স্বাস্থ্য পরিসেবায় রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ডায়ালিসিস, ব্লাড ট্রান্সফিউশন, এবং বেশ কিছু ল্যাব টেস্টের জন্য বিনামূল্যে পরিষেবা চালু করেছে। এবার সেগুলির তালিকায় সিটি স্ক্যান যুক্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষের জন্য এক বিশাল সুবিধার দ্বার খুলল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এলাকাবাসীর বক্তব্য, “আমরা খুব খুশি। আগে অনেক সময়, অর্থ এবং দূরত্বের কারণে সিটি স্ক্যান করাতে পারতাম না। এখন এই পরিষেবা হাতের কাছে পাওয়ায় দ্রুত চিকিৎসা করানো সম্ভব হবে।”
সার্বিকভাবে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নের এই ধারা রাজ্যের অন্য মহকুমা ও ব্লক হাসপাতালেও ছড়িয়ে পড়বে বলেই প্রত্যাশা করা হচ্ছে।