মাইথনে বনভোজনের ওপর নিষেধাজ্ঞা, নববর্ষ থেকেই কার্যকর একগুচ্ছ নতুন নিয়ম

২০২৫ সালের প্রথম দিন থেকেই পশ্চিম বর্ধমানের মাইথনে বনভোজনের ওপর বেশ কিছু নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বন দফতর (Maithan)। প্রতি বছর ইংরেজি নববর্ষের দিন মাইথন…

Forest Department Issues New Directions for Tourists at Maithan

২০২৫ সালের প্রথম দিন থেকেই পশ্চিম বর্ধমানের মাইথনে বনভোজনের ওপর বেশ কিছু নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বন দফতর (Maithan)। প্রতি বছর ইংরেজি নববর্ষের দিন মাইথন (Maithan)  জলাধারের আশপাশে বনভোজনের জন্য বহু মানুষ ভিড় জমায়, তবে এবার প্রশাসনের তরফে নতুন নিয়মের মাধ্যমে সেটি নিয়ন্ত্রিত করা হবে। লক্ষ্য হলো

পরিবেশের (Maithan) ক্ষতি না করে সবাই যাতে নিরাপদভাবে বনভোজন করতে পারেন, সেই সঙ্গে বন্যপ্রাণী রক্ষায়ও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই নতুন নিয়মের আওতায় কিছু জায়গায় পিকনিক করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তবে সেখানে কিছু শর্তের সাথে এই কাজ করা যাবে।

   

মাইথন (Maithan) জলাধারের আশপাশে গত বছরের ডিসেম্বর মাসের ২৫ তারিখে লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হয়েছিল, যেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা এবং পরিবেশগত ক্ষতির ঘটনা ঘটে। অধিকাংশ মানুষ অবাধে রান্না করছিলেন, উনুন জ্বালাচ্ছিলেন, এবং শব্দবদ্য উত্সবের আয়োজন করছিলেন, যা বন্যপ্রাণীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। অনেকেই প্লাস্টিক এবং থার্মোকল ব্যবহার করছিলেন, যা পরিবেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। এইসব কারণে বন দফতর (Maithan) এবং জেলা প্রশাসন এবার এই নিয়মগুলি জারি করেছে।

নতুন নিয়মের নির্দেশিকা
বন দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী, মাইথনের থার্ড ড্রাইক, মিলেনিয়াম পার্ক, রাইফেল শুটিং রেঞ্জ সহ কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থান চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে, যেখানে পিকনিক করা যাবে। এ ছাড়া, অনুমতি ছাড়া কেউ গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করতে পারবেন না।

এছাড়াও, বেশ কিছু বিশেষ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে:

উচ্চ শব্দে গানবাজনা করা যাবে না: পিকনিকের সময় গানের আওয়াজ যাতে অতিরিক্ত না হয়, তার জন্য এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
পটকা ফাটানো নিষিদ্ধ: পটকা বা অন্য কোনো ধরনের বিপজ্জনক দ্রব্য ব্যবহার করা যাবে না।
জঙ্গলে রান্না করা যাবে না: কেউ যেন জঙ্গলের মধ্যে রান্নার ব্যবস্থা না করেন, সেই জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্লাস্টিক এবং থার্মোকল ব্যবহার নিষিদ্ধ: পরিবেশের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
মদ্যপান করা যাবে না: মদ্যপান করে জঙ্গলে সময় কাটানো যাবে না, যা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
মাইথনে যেভাবে প্রচুর মানুষ আসেন, সেখানে জন নিরাপত্তার জন্যও একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানা অঞ্চলে পুলিশের বিশেষ নজরদারি রাখা হয়েছে। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ট্র্যাফিক গার্ড থানার পুলিশ ক্যাম্পের মাধ্যমে পিকনিক এলাকায় পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। পুলিশ ছাড়াও সিভিল ডিফেন্স টিমও রয়েছে, যারা দ্রুত উদ্ধার কাজ করতে প্রস্তুত। জলে বা জঙ্গলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পিকনিকের জন্য নির্দিষ্ট স্থান
বন দফতর জানিয়েছে, যে স্থানগুলোতে পিকনিক করা যাবে, সেখানে গ্রাহকদের কোনো ধরনের অনিয়ম বা উলংঘন না করতে অনুরোধ করা হচ্ছে। জঙ্গলের গভীর এলাকায় প্রবেশ বা নিষিদ্ধ জায়গায় পিকনিক আয়োজন করলে জরিমানা করা হবে। স্থানীয় ব্লক প্রশাসনও এই বিষয়ে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে এবং নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড টাঙানো হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়।

মাইথন বেড়াতে আসার জন্য বিভিন্ন জেলা এবং রাজ্য থেকে প্রচুর পর্যটক আসেন। কলকাতা, বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান, হুগলি, এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের মানুষদের মধ্যে মাইথন খুবই জনপ্রিয়। মাইথনের অন্যতম আকর্ষণ হলো কল্যাণেশ্বরী মন্দির, যেখানে পুজো দেওয়ার পর নৌকো ভ্রমণও করা যায়। নৌকা করে মাইথন জলাধারের মধ্যে ছোট ছোট দ্বীপগুলোর দর্শন করা যায়, যেখানে গাছপালা ও ফুলের মেলা দেখা যায়। শান্ত ও মনোরম পরিবেশে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসেন বহু মানুষ।