সল্টলেকের উন্নয়নে প্রশাসনিক বৈঠকে পুরমন্ত্রী ফিরহাদের কড়া নির্দেশ

সল্টলেকের (Saltlake) উন্নয়নে প্রশাসনিক বৈঠকে পুরমন্ত্রী ফিরহাদের (Firhad Hakim) কড়া নির্দেশ (directions)। ২০১৬ সালে এক প্রশাসনিক বৈঠকে (Administrative Meeting) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছিলেন, “সল্টলেকে…

KMC Mayor Firhad Hakim Refuses to Increase Councillors' Allowance

short-samachar

সল্টলেকের (Saltlake) উন্নয়নে প্রশাসনিক বৈঠকে পুরমন্ত্রী ফিরহাদের (Firhad Hakim) কড়া নির্দেশ (directions)। ২০১৬ সালে এক প্রশাসনিক বৈঠকে (Administrative Meeting) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছিলেন, “সল্টলেকে শুধু ডেঙ্গি হবে, কাজ হবে না?” এই প্রশ্নের মধ্য দিয়ে তিনি সল্টলেকের উন্নয়ন (Development) ও পরিষেবার গাফিলতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আনে। তখন থেকেই সল্টলেকের পুর পরিষেবা নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ ও অসন্তোষ শুরু হয়। কিন্তু ৮ বছর পরও সেই পরিস্থিতি বিশেষভাবে বদলায়নি। নানা কাজের অগ্রগতি এবং পরিষেবা প্রদান নিয়ে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে, যার ফলে সল্টলেকের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।

   

চলতি বছরের ২৪ জুন, পুর বিষয়ক প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও বিধাননগর পুরনিগমের বিভিন্ন গাফিলতি তুলে ধরেন এবং তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, “এ বার কি আমাকে রাস্তা ঝাঁট দিতে বেরোতে হবে?” এর মাধ্যমে তিনি প্রশাসনিক অবহেলা এবং পরিষেবার ক্ষেত্রে শিথিলতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সল্টলেকের সমস্যা সমাধানের তাগিদ দিয়েছিলেন। তবে, এই সমস্ত উদ্যোগের পরেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে সল্টলেকের পুর পরিষেবার উন্নতি ও গতি আনতে গত বৃহস্পতিবার পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) সেখানকার সব কাউন্সিলারদের নিয়ে একটি বিশেষ বৈঠক করেন।

সল্টলেকের (Saltlake) নগরোন্নয়ন ভবনে আয়োজিত এই বৈঠকে ৪১টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলারদের উপস্থিতি ছিল, সঙ্গে ছিলেন দমকলমন্ত্রী তথা বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু, রাজারহাট–নিউ টাউনের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় এবং রাজারহাট গোপালপুরের বিধায়ক অদিতি মুন্সি। এই বৈঠকটি সল্টলেকের পুর পরিষেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা ও কার্যক্রমের গতি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ছিল।

বিধাননগর পুরনিগমের মধ্যে একাধিক শাসক দলের নেতা-নেত্রীর পারস্পরিক টানাপড়েনের কারণে সল্টলেকের উন্নয়ন এবং পরিষেবা প্রদানে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। কিছু সূত্র অনুযায়ী, এই সমস্যার কথা নবান্নের শীর্ষ স্তরে পৌঁছেছে, এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে সল্টলেকের পুর পরিষেবা নিয়ে জরুরি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বৈঠকে বলেন, “সল্টলেকের মানুষ ভালো পরিষেবা পান, সেটাই মুখ্যমন্ত্রী চান। আপনাদের ভোট দিয়ে মানুষ জয়ী হয়েছেন পরিষেবা পাওয়ার জন্য।”

ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)আরও বলেন, কাউন্সিলারদের এই দায়িত্ব নিতে হবে যাতে সল্টলেকের বাসিন্দারা উন্নত পরিষেবা পেতে পারেন। সল্টলেকের যে কয়েকটি সমস্যার কারণে বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ, তার মধ্যে অন্যতম হল রাস্তাঘাটের খারাপ অবস্থা এবং সঠিকভাবে ময়লা সাফাই না হওয়া। সল্টলেকের রাস্তা ও অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য একাধিক সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে। বৈঠক শেষে ফিরহাদ জানান, বিধাননগরে পর্যাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার না থাকার কারণে রাস্তার কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হচ্ছে না। এই সমস্যা সমাধানে কেএমডিএ থেকে কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার ডেপুটেশনে পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, অন্যান্য ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলোর সমাধানও দ্রুত করার কথা জানান তিনি। বৈঠকে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)আরও বলেন, “আমরা চাই, সল্টলেকের সব রাস্তা, জলসংশ্লিষ্ট সমস্যা, এবং পরিষেবার অগ্রগতি দ্রুততার সাথে সম্পন্ন হোক। এই বিষয়ে সমস্ত কাউন্সিলারদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।”

সল্টলেকের একটি বড় সমস্যা ছিল রাস্তার অবস্থা। সল্টলেকের বাসিন্দারা প্রায়শই অভিযোগ করেছেন যে, রাস্তাঘাটের অবস্থা খুব খারাপ এবং সঠিকভাবে মেরামত করা হয়নি। ময়লা পরিষ্কারের কাজও ঠিকভাবে হচ্ছে না। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সল্টলেকের কাউন্সিলারদের আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি তাদের জানান, তারা যেন নিজের এলাকা ও জনগণের প্রতি আরও মনোযোগ দেন এবং দ্রুততম সময়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন।

সল্টলেকের উন্নয়ন এবং পরিষেবা নিশ্চিত করতে শাসক দলের নেতারা যেমন উদ্যোগ নিচ্ছেন, তেমনি তাদের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বও দেখা দিয়েছে। কিছু নেতা-নেত্রীদের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কারণে সল্টলেকের উন্নয়ন প্রক্রিয়া বেশ কিছুদিন থমকে ছিল। তবে, এখন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের নেতৃত্বে সল্টলেকের পুর পরিষেবা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে এবং দ্রুততার সাথে কাজ শুরু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এখানে উল্লেখযোগ্য যে, সল্টলেককে (Saltlake) একটি “স্মার্ট সিটি” হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ শুরু হয়েছিল বহু আগে। কিন্তু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অচলাবস্থা এবং পরিকল্পনার অভাবের কারণে সেই স্বপ্ন আজও পূর্ণতা পায়নি। সল্টলেকের উন্নয়ন এবং পরিষেবার মধ্যে যে শিথিলতা রয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim) নেতৃত্বে এক নতুন দিক নির্দেশনা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সল্টলেকের (Saltlake) বাসিন্দাদের জন্য উন্নত পরিষেবা নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে শুধুমাত্র প্রশাসনকেই, বরং স্থানীয় কাউন্সিলারদেরও আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। তাঁদের সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে সল্টলেককে (Saltlake) উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, যাতে সল্টলেকের প্রতিটি বাসিন্দা উন্নত নাগরিক সুবিধা পেতে পারেন এবং একে একটি আদর্শ নগরে পরিণত করা সম্ভব হয়।