মিলন পণ্ডা, এগরা: পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এগরা সারদা শশিভূষণ কলেজে বৃহস্পতিবার সকালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের (Fire) ঘটনা ঘটে। সকাল প্রায় ৭টা নাগাদ কলেজের বিজ্ঞান ভবনের (সায়েন্স বিল্ডিং) দিক থেকে কালো ধোঁয়া উঠতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এরপরই দ্রুত খবর দেওয়া হয় এগরা থানার পুলিশ ও দমকল বিভাগকে।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, কলেজের কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরি থেকেই আগুনের (Fire) সূত্রপাত হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রথমে ছোট ছোট আগুনের ফুলকি দেখা গেলেও কয়েক মিনিটের মধ্যেই আগুনের তীব্রতা বেড়ে যায় এবং দ্রুত গোটা সায়েন্স বিল্ডিং জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে, চারপাশে ধোঁয়ার ঘন কুয়াশা ছেয়ে যায়।
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দমকলের দুটি ইঞ্জিন। দমকল কর্মীরা প্রায় দু’ঘন্টা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে আগুন (Fire) নিয়ন্ত্রণে আনেন। এই সময়ে কলেজ চত্বরে প্রবল আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়।
ভাগ্যক্রমে, ঘটনার সময় সকালবেলা থাকায় ছাত্রছাত্রী ও কলেজ কর্মীরা কেউ উপস্থিত ছিলেন না, ফলে কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। যা খানিকটা স্বস্তির বিষয় বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, কেমিস্ট্রি ল্যাবে থাকা বেশ কিছু মূল্যবান যন্ত্রপাতি, পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র এবং ল্যাবের বিভিন্ন কেমিক্যাল এই অগ্নিকাণ্ডের (Fire) ফলে সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। আগুনের তীব্রতার কারণে বিজ্ঞান ভবনের একাধিক অংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোটা ভবনটি কালো ধোঁয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেওয়াল, জানালা ও দরজা এখন পোড়া গন্ধে।
দমকল বিভাগের এক আধিকারিক নিমাই মাইতি জানান, “দুটি ইঞ্জিন দিয়ে আগুন (Fire) নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে কিভাবে আগুন লাগল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আপাতত শর্ট সার্কিট অথবা কেমিক্যাল রিয়্যাকশনকেই কারণ বলে মনে হচ্ছে।”
এগরা থানার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের (Fire) কারণ জানতে ফায়ার অডিট করা হবে।”
এগরা পুরসভার কাউন্সিলর জয়ন্ত সাহু বলেন, “এটা বড় ধরনের দুর্ঘটনা। স্থানীয় বাসিন্দা, দমকল এবং পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপের কারণেই বড় বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগের বহু মূল্যবান সামগ্রী পুড়ে গিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই বেশি। বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট কিংবা ল্যাবে থাকা কেমিক্যাল থেকেই আগুন লেগেছে বলে অনুমান করছি।”
ঘটনার পর আপৎকালীন নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে কলেজ কর্তৃপক্ষ সায়েন্স বিল্ডিং আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছাত্র-ছাত্রী এবং কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আগে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের এক অধ্যাপক।
ঘটনার জেরে এগরা কলেজ চত্বরে চরম উদ্বেগ এবং আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বহু মানুষ কলেজের সায়েন্স বিল্ডিং দেখতে ভিড় করেছেন।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ঘটনাস্থলের পরিদর্শন করেছে ফরেনসিক দল। অগ্নিকাণ্ডের সঠিক কারণ জানতে রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।
কলেজ প্রশাসন ইতিমধ্যেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের কাজ শুরু করেছে এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার কথা ভাবা হচ্ছে।
