বাঘিনীর ভয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়া দুষ্কর, আতঙ্কে চাকুলিয়া ব্লকের পড়ুয়ার

বাঘিনীর (tiger) আতঙ্কে আক্রান্ত চাকুলিয়া (Chakulia) ব্লকের (block) রাজাবাসা ও আশপাশের গ্রামের মানুষদের জীবনযাত্রা একেবারে থমকে গেছে। রাজাবাসা গ্রামের বাঘিনী জ়িনাতের আতঙ্কে পুরো এলাকা তোলপাড়…

tiger Chakulia block

বাঘিনীর (tiger) আতঙ্কে আক্রান্ত চাকুলিয়া (Chakulia) ব্লকের (block) রাজাবাসা ও আশপাশের গ্রামের মানুষদের জীবনযাত্রা একেবারে থমকে গেছে। রাজাবাসা গ্রামের বাঘিনী জ়িনাতের আতঙ্কে পুরো এলাকা তোলপাড় হয়ে উঠেছে। গত আট দিন ধরে বন দপ্তরের কর্মীরা জ়িনাতকে ধরতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে সফলতা অধরা। এমনকি, তিন দিন ধরে জ়িনাত রাজাবাসার শাল জঙ্গলে আশ্রয় নিলেও তাকে আটকানো সম্ভব হয়নি। বাঘিনীর (tiger) আতঙ্কে পড়ুয়ারা (students) স্কুলে যেতে পারছেন না, এবং গ্রামের মানুষজনও বাড়ির বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন।

রাজাবাসা গ্রামের কেদারনাথ ঝুনঝুনওয়ালা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র দুর্গাপদ নায়েক বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। তবে বাঘের ভয়ে আমরা ঘুরপথে ক্যানাল পার করে স্কুলে যাতায়াত করছি। গ্রাম থেকে স্কুলের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার, তবে রাস্তা বন্ধ থাকায় আমাদের এই কঠিন পথ বেছে নিতে হচ্ছে। আমাদের গ্রামের চার জন ছাত্র বোর্ড পরীক্ষায় বসছে, কিন্তু অন্যান্য ৪০-৫০ জন ছাত্র বাঘের ভয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।’’

   

এদিকে, বাঘিনীর আতঙ্কে রাজাবাসা গ্রামের গৃহবধূ নিয়তি নায়ক বলেন, ‘‘বাঘ জঙ্গলে থাকার কারণে বন দপ্তর আমাদের ঘর থেকে বেরোতে নিষেধ করেছে। আমরা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছি, আর এই কারণে রুটি-রুজির জন্য বাইরের কাজকর্মেও যেতে পারছি না। পুরো গ্রামে অসুবিধা হয়ে গেছে।’’

বন দপ্তর এলাকায় মাইকে প্রচার করে জানাচ্ছে, যাতে কেউ জঙ্গলের দিকে না যায়। গবাদি পশুদেরও জঙ্গলে পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাজাবাসা গ্রামের প্রধান রাস্তায় যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যার ফলে গ্রামের বাসিন্দারা ঘুরপথে যাতায়াত করছেন। এলাকার মানুষের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বন দপ্তরের একটি নতুন টিম রাজাবাসায় এসে বাঘিনীর অবস্থান অনুসন্ধান শুরু করেছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তারা বাঘিনীর দেখা পায়নি। একটি টিম সকালে জঙ্গলে প্রবেশ করে, তবে বিকেল পর্যন্ত তারা সেখান থেকে ফিরে আসেনি। স্থানীয় বাসিন্দা অধ্যাপক নরেন্দ্র মুর্মু জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের বাড়ি থেকে বাঘিনী প্রায় আট কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। রাজাবাসা জঙ্গলটি চাকুলিয়া ও কোকপাড়ার স্টেশনের মধ্যে পড়ছে এবং জামবনি ও গিধনির জঙ্গলের সঙ্গে এর সংযোগ রয়েছে। বনকর্মীরা জিপিএস দিয়ে নজরদারি চালাচ্ছেন, কিন্তু তাদের সাফল্য এখনও অধরা।’’

এদিকে, এই ভয়ের কারণে আশপাশের স্কুলগুলির পড়ুয়াদের মধ্যে এক অজানা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতেও কমে গেছে উপস্থিতি। পড়ুয়ারা স্কুলে না গিয়ে নিজেদের ঘরে আতঙ্কিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। এটি শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি করছে না, বরং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জীবনযাত্রাকেও বিপর্যস্ত করে তুলেছে। কিছু পরিবারও খাবার এবং অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করতে পারছে না, কারণ বন দপ্তরের পক্ষ থেকে বাইরে বেরোনোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

বন দপ্তরকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাজাবাসা গ্রামের অনেক বাসিন্দা বলছেন, ‘‘এভাবে আতঙ্কে দিন কাটানো সম্ভব নয়। বন দপ্তর যদি আরও দ্রুত ব্যবস্থা নিত, তাহলে আমাদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে পারত।’’ বন দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা বাঘিনী জ়িনাতকে ধরার জন্য বিভিন্ন প্রকারের কৌশল প্রয়োগ করছেন, এবং এর মধ্যে জিপিএস ট্র্যাকিং ও বিশেষ টিমের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে বন দপ্তর এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি।

এই পরিস্থিতি যে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, সে ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এলাকার বাসিন্দারা। বাঘের ভয়ে লোকজন ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন এবং জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন হলো, বাঘিনী জ়িনাতকে ধরতে বন দপ্তর কতটুকু সফল হতে পারে এবং এলাকার মানুষরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে কিনা।