কলকাতা: রাজ্যে ভোটার তালিকায় ভুয়ো (Fake Voters Detected) নাম সংযোজনের অভিযোগ ঘিরে রীতিমতো তৎপর হয়েছে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতর। ভোটার তালিকায় নাম সংযোজন প্রক্রিয়ার সময় করা এক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে ১১০ জন ভুয়ো ভোটারের অস্তিত্ব। তার জেরে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সমস্ত জেলার ডিস্ট্রিক্ট ইলেকশন অফিসারদের ১৪ অগাস্টের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তের জন্য জেলার সিনিয়র আধিকারিকদের নিয়ে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সিইও দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, “গত কয়েক মাস ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ভোটার তালিকায় বহু নতুন নাম তোলা হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেগুলির অনেকগুলি নামের ক্ষেত্রে না হয়েছে পর্যাপ্ত নথি যাচাই, না হয়েছে ফিল্ড ভেরিফিকেশন। এমনকী, বেশ কিছু ক্ষেত্রেই বিএলওদের (Booth Level Officer) মাধ্যমে যাচাই করাও হয়নি।” এই গাফিলতির কারণেই উঠে এসেছে ভুয়ো ভোটারদের নাম।
প্রসঙ্গত, এই ধরনের গাফিলতির প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই তিনজন ইলেক্টরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ERO)-কে সতর্ক করা হয়েছে। সিইও দফতরের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, “ফর্ম ৬-এর নমুনা পরীক্ষা করার সময় বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যাঁদের নাম ভোটার তালিকায় তোলা হয়েছে তাঁদের নাম-ঠিকানা, জন্মতারিখ বা পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিল নেই। এমনকী, একাধিক ক্ষেত্রে দেখা গেছে একই ব্যক্তি একাধিক কেন্দ্রের তালিকায় নাম তুলেছেন।”
আরও উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে যে, ব্লক স্তরের বিডিও অফিসে কর্মরত বেশ কয়েকজন ক্যাজুয়াল ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে যথাযথ অনুমতি ছাড়াই ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যার জেরে তথ্যের অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
সিইও দফতরের তরফে জেলাগুলিকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, “এই অব্যবস্থার ফলে ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাই জেলা শাসকদের নেতৃত্বে বিশেষ দল গঠন করে সমস্ত নতুন সংযোজন খতিয়ে দেখতে হবে এবং আগামী ১৪ অগাস্টের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠাতে হবে।”
নির্বাচনের নির্ভুলতা ও স্বচ্ছতা রক্ষার স্বার্থে এই উদ্যোগ বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা এড়াতে ভোটার তালিকায় নাম তোলার প্রক্রিয়ায় কড়া নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে সিইও দফতর।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির প্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, ভুয়ো ভোটারদের মাধ্যমে ভোটে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ বহুবার উঠেছে। সেই সম্ভাবনাকে রুখতেই এবার এতটা সক্রিয় হয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধীরাও মুখ খুলেছে। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, শাসকদলের প্রশ্রয়ে এই ধরনের ভুয়ো নাম সংযোজন হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। যদিও শাসকদল এই অভিযোগ নস্যাৎ করেছে।
সব মিলিয়ে, রাজ্যের ভোটার তালিকা নিয়ে নতুন করে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। এবার দেখার বিষয়, আগামী ১৪ অগাস্টের রিপোর্টে ঠিক কতটা ভুয়ো নাম চিহ্নিত হয় এবং কী ব্যবস্থা নেয় নির্বাচন কমিশন।