মিলন পণ্ডা, কাঁথি: পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথিতে এক ভুয়ো চিকিৎসকের (Fake Doctor) খোঁজে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অন্য এক চিকিৎসকের নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন কাঁথির দুরমুঠ গ্রামের বাসিন্দা বরুণ দাস। ঘটনাটি সামনে আসতেই তৎপর হয় কাঁথি থানার পুলিশ। অভিযোগ দায়ের হওয়ার খবর পেয়েই চেম্বারে তালা ঝুলিয়ে চম্পট দেন বরুণ।
জানা গিয়েছে, কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের হাতিশাল বাজারে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চেম্বার খুলে বসতেন বরুণ দাস। তাঁর প্রেসক্রিপশন প্যাডে লেখা থাকত বিএসসি, এমবিবিএস (ক্যাল), এমনকি নিজেকে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন চিকিৎসক হিসেবেও উল্লেখ করতেন তিনি।
তবে সবকিছু প্রকাশ্যে আসে কাঁথি শহরের জালালখাঁবাড়ের বাসিন্দা প্রশান্ত সাহুর অভিযোগের পর। গত ৩০ জুন প্রশান্ত বাবু পেটের সমস্যার জন্য বরুণ দাসের চেম্বারে যান। শারীরিক পরীক্ষার পর বরুণ একাধিক ওষুধ এবং অনেকগুলি টেস্টের পরামর্শ দেন, এমনকি প্রাণের ঝুঁকি বলেও ভয় দেখান। কিন্তু এরপর অন্য এক অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গেলে জানা যায়, ওই ওষুধ বা টেস্টের প্রয়োজনই নেই। এই ঘটনাতেই সন্দেহ জাগে প্রশান্ত বাবুর।
পরে তিনি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিলের (NMC) ওয়েবসাইটে বরুণ দাসের ব্যবহৃত রেজিস্ট্রেশন নম্বর যাচাই করেন। দেখা যায়, সেটি অন্য এক চিকিৎসকের নামের সঙ্গে যুক্ত। বিষয়টি জানার পর তিনি গত ১৮ জুলাই কাঁথি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক তদন্তে ভুয়ো চিকিৎসার প্রমাণ মেলায় তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তকারী অফিসার চন্দন মাইতি জানান, “অভিযুক্ত চিকিৎসক চেম্বারে তালা মেরে গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁকে খুঁজে বার করার চেষ্টা চলছে।”
সূত্রের খবর, বরুণ দাস একসময় কোয়াক চিকিৎসক ছিলেন। গ্রামাঞ্চলে রোগীর ভিড় না থাকায় নিজের পরিচয় বদলে নেন তিনি। এরপর নিজেকে এমবিবিএস ও জেনারেল ফিজিশিয়ান হিসেবে প্রচার করতে শুরু করেন। প্রেসক্রিপশন প্যাডে ভুয়ো রেজিস্ট্রেশন নম্বরও ব্যবহার করতেন। অনেক সাধারণ মানুষ সেই পরিচয় বিশ্বাস করে তাঁর কাছে চিকিৎসা করাতেন।
এই ঘটনা সামনে আসার পর আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। বহু মানুষ আছেন যারা গত কয়েক বছরে বরুণ দাসের চিকিৎসায় ওষুধ বা টেস্ট করেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে এখন নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগে ভুগছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। তাঁর খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকেও অফিসিয়ালি তথ্য চাওয়া হয়েছে। পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতরের যৌথ উদ্যোগে কাঁথি ও সংলগ্ন এলাকায় ভুয়ো চিকিৎসকদের ধরতে শুরু হয়েছে বিশেষ নজরদারি। স্বাস্থ্য নিয়ে এই ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ নেবে বলেও সূত্রের খবর।