মিলন পণ্ডা, রামনগর: সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। আর তার আগেই শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসে পড়েছে রামনগরে (Ramnagar)। বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরির বিরুদ্ধে ‘ভূমিপুত্র’ প্রার্থী দেওয়ার দাবি উঠেছে দলের একাংশের তরফে। আর সেই দাবি ঘিরেই এখন তৃণমূলের ভিতরে তীব্র কোন্দল।
ঘটনার সূত্রপাত ৯ আগস্ট। সেদিন ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের বর্ষপূর্তি ও রাখিবন্ধন উপলক্ষে রামনগর ১ ও রামনগর ২ ব্লক এলাকায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে পৃথক বাইক মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। রামনগর ১ ব্লকের মিছিল থেকে প্রকাশ্যে উঠে আসে ‘ভূমিপুত্র প্রার্থী’-র দাবি। ওইদিন পুরানো দিঘার সভায় অখিল গিরির একসময়ের ঘনিষ্ঠ, বর্তমানে জেলা সভাধিপতি উত্তম বারিকের অনুগামী কিছু নেতা-নেত্রী অখিলবাবুর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সুর চড়ান। ফলে দলের অন্দরের এই বিবাদ জনসমক্ষে চলে আসে।
এই ঘটনার আট দিন পর, রবিবার অখিল গিরির অনুগামীরা সাংবাদিক বৈঠক করে সরাসরি প্রশ্ন তোলেন— “যাঁরা ভূমিপুত্র প্রার্থীর দাবি তুলছেন, তাঁরা কি আদৌ তৃণমূল কংগ্রেসের অংশ?” তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যের ২৯৪ আসনের মুখ একমাত্র দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি যাঁকে প্রার্থী করবেন, সেটিই দলের সিদ্ধান্ত। সেক্ষেত্রে ‘ভূমিপুত্র প্রার্থী’ দাবি আসলে মমতা ব্যানার্জির প্রতি এবং দলের প্রতি অবমাননা ছাড়া আর কিছু নয়।
রামনগর ১ ও ২ ব্লক সভাপতি উত্তম দাস ও সত্যরঞ্জন দাস বলেন, “অখিল গিরি অবিভক্ত মেদিনীপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম সৈনিক। তাঁর হাত ধরেই তৃণমূল এই জেলায় পা রাখে এবং উত্থান ঘটে। যাঁরা তাঁর অবদানকে অস্বীকার করছেন, তাঁরা আসলে দলেরই অবমাননা করছেন।”
এদিন রামনগরের একটি বেসরকারি প্রেক্ষাগৃহে ১৭টি অঞ্চল নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক ডাকে তৃণমূল। সেখানে দুই ব্লক সভাপতি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ সদস্য শম্পা মহাপাত্র, রামনগর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অনুপ গিরি, শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ নিলম রায়, যুব তৃণমূল সভাপতি অনুপ মাইতি, কৃষক ক্ষেতমজুর সংগঠনের সভাপতি বিশ্বরঞ্জন মিশ্র প্রমুখ। তবে এদিনের বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন বিধানসভা কমিটির আহ্বায়ক নিতাইচরণ সরকার। তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে জল্পনা বাড়ে— তিনি কি তবে ‘ভূমিপুত্র’ শিবিরে যোগ দিয়েছেন? যদিও এ বিষয়ে সরাসরি কিছু জানা যায়নি। দলের অন্দরের সূত্রে খবর, ‘ভূমিপুত্র’ শিবিরের মধ্যেও এখন একাধিক প্রার্থীর নাম সামনে আসছে। নিতাইচরণ সরকারও তাঁদের মধ্যে অন্যতম বলে শোনা যাচ্ছে। ফলে ওই গোষ্ঠীর ভেতরেও দ্বন্দ্ব দানা বাঁধছে।
এই অবস্থায় অনেকেই মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত দলেরই ক্ষতি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে রামনগর ২ পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ নিলম রায় বলেন, “গতবার বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের দলনেত্রী নন্দীগ্রাম থেকে লড়েছিলেন। তিনি চাইলে রামনগর থেকেও লড়াই করতে পারেন। কিন্তু কিছু নেতা-নেত্রীর এই ধরণের ‘উটকো’ দাবি দলনেত্রীকেও অপমান করছে। আমরা চাই, দলের ভেতরে রেষারেষি বন্ধ হোক।”
সব মিলিয়ে পরিষ্কার, রামনগরে গোষ্ঠী কোন্দল দিনে দিনে তীব্র হচ্ছে। মমতা ব্যানার্জি কাকে ভরসা করে প্রার্থী করবেন, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট— ‘ভূমিপুত্র’ বিতর্কে অখিল গিরির অনুগামীরা আপাতত কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। ফলে আগামী দিনে এই দ্বন্দ্ব কোন দিকে মোড় নেয়, সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।