তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) প্রতিষ্ঠা দিবসকে ঘিরে ফের রাজনৈতিক বিতর্কের আবহ। আগামী ২৮ আগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ৬৬তম প্রতিষ্ঠা দিবস। প্রতিবছরের মতো এবারও কলকাতার ধর্মতলার ঐতিহাসিক ময়দানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের উচ্ছ্বাস থাকলেও, পরীক্ষা সূচিকে কেন্দ্র করে রাজ্যের দুই বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিন্নমুখী সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক রঙ চড়েছে।
বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Biswa Bangla University) পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২৮ আগস্ট নির্ধারিত স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। ওই পরীক্ষা নেওয়া হবে ৩০ আগস্ট, শুক্রবার। বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ, “পরিবহণ সমস্যার সম্ভাবনা এবং ছাত্রদের অনুরোধ বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” এই ঘোষণার পর থেকেই বিরোধীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।
রাজ্য বিজেপির শিক্ষাবিষয়ক নেতাদের অভিযোগ, “শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের স্বার্থ রক্ষা করতেই বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা স্থগিত করেছে। এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাবিত সিদ্ধান্ত।” বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বাড়ছে এবং এই পদক্ষেপ তারই প্রমাণ।
অন্যদিকে, তৃণমূলপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতারা এই অভিযোগ খারিজ করেছেন। তাদের বক্তব্য, “পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনের কারণ সম্পূর্ণ প্রশাসনিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং পরিবহণ সমস্যার কথা মাথায় রেখেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিরোধীরা অযথা রাজনৈতিক রং চড়ানোর চেষ্টা করছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ট্রোলার অফ এক্সামিনেশনের কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। তবে বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবেই পরীক্ষা পিছনোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, একই দিনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু ভিন্ন পথে হেঁটেছে। ওই দিন দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বি.কম সেমিস্টার ৪ এবং বিএ এলএলবি সেমিস্টার ৪-এর পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে তারা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অবস্থানকে কেন্দ্র করেও শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। অনেক ছাত্রছাত্রী অভিযোগ তুলেছেন যে, পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন না হওয়ায় তারা রাজনৈতিক কর্মসূচি ও শিক্ষাগত দায়িত্বের মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ধর্মতলায় অনুষ্ঠিতব্য বার্ষিক প্রতিষ্ঠা দিবসের সভায় প্রতি বছরই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকেন। এবারও তাদের একইভাবে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। ফলে ছাত্রছাত্রীদের একটি বড় অংশ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারবে না বলেই আশঙ্কা।
শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবের এই দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। তবে বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার তারিখ পিছিয়ে দেওয়া এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত রাখার ঘটনায় বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে। শিক্ষাবিদদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা থাকা উচিত, তবে শিক্ষার্থীদের অসুবিধা যেন না হয়, সেটাও বিবেচনায় রাখা জরুরি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির সিদ্ধান্ত প্রায়শই রাজনৈতিক আবহে আবদ্ধ। ফলে শিক্ষার্থীরা বারবার সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এখন নজর আগামী ৩০ আগস্টের দিকে, যেদিন বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে দেওয়া পরীক্ষা নেবে, এবং দেখা যাবে, এই বিতর্ক শিক্ষাঙ্গনে আরও নতুন মোড় নেয় কি না।