তিব্বতের পূর্বাঞ্চলে মাউন্ট এভারেস্টের (Mount Everest) ঢালে ভয়াবহ তুষারঝড়ের ফলে আটকে পড়েছেন ২০০-রও বেশি পর্বতারোহী ও পর্যটক। এই সকল পর্যটকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হলেও, এখনও তাঁদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
ঘটনাটি ঘটে চীনের আটদিনব্যাপী জাতীয় ছুটির শুরুতেই। এই সময়েই হাজার হাজার মানুষ দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। এই সময়ই অনেক পর্যটক রওনা দিয়েছিলেন তিব্বতের পূর্বপ্রান্তে এভারেস্টের পূর্ব মুখ (eastern face) ঘিরে থাকা উপত্যকার উদ্দেশ্যে। সাধারণত এই সময়ে এমন দুর্যোগের সম্ভাবনা কম থাকে, তবে স্থানীয় গাইড ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের তুষারপাত ছিল অস্বাভাবিক এবং রীতিমতো ভয়াবহ। অনেক স্থানে হাঁটু পর্যন্ত বরফ জমে গিয়েছিল, আর সেই সঙ্গে প্রবল হাওয়ায় পথ চলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
ইতিমধ্যেই প্রায় ৩৫০ জন পর্যটককে নিরাপদে উদ্ধার করে আশ্রয়শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা মূলত সেই পর্যটক দল, যারা অপেক্ষাকৃত নিচু অঞ্চলে আটকে ছিলেন।
তবে এখনও প্রায় ২০০ জনের বেশি মানুষ উচ্চ অঞ্চলে আটকে আছেন, যেখানে পৌঁছনোও কঠিন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভঙ্গুর। সেখানকার পথ ও রাস্তা তুষারে বন্ধ হয়ে গেছে এবং হিমবাহের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় এক অভিজ্ঞ গাইড বলেন, “এই সময়ে এমন তুষারপাত আগে কখনও দেখিনি। বরফ এতটাই পুরু যে অনেক ট্রেকিং পথ পুরোপুরি হারিয়ে গেছে।” তিনি আরও বলেন, “উদ্ধারকারী দলগুলো এখন একের পর এক দলকে নিচে নামিয়ে আনতে কাজ করছে, কিন্তু পরিস্থিতি খুব কঠিন।”
তিব্বতের মতো সংবেদনশীল অঞ্চলে যখন এমন কোনো বড় দুর্যোগ ঘটে, তখন চীনা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তথ্য প্রকাশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়ে থাকে। এই ঘটনাতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। উদ্ধারকাজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে গড়িমসি করছে সরকার-নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম, এবং স্থানীয়ভাবে ছবি বা ভিডিও শেয়ার করাও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।
আটকে পড়া পর্যটকদের পরিবারের সদস্যরা চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই নিজেদের প্রিয়জনদের খোঁজে পোস্ট করছেন, যোগাযোগের চেষ্টা করছেন তিব্বতের স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে।
চীনা প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, সবাইকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য পুরো রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো কাজে লাগানো হচ্ছে, এবং উদ্ধারকারী দলগুলো প্রশিক্ষিত ও সজ্জিত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে, কারণ আবহাওয়া এখনও প্রতিকূল রয়েছে।