জলদাপাড়ায় (Jaldapara) হাতির (Elephant) হামলায় (Attack) প্রাণ গেল তিন মহিলার (Three Women), নতুন বিপদ বক্সায় বুনো শুয়োরের (Firewood) আক্রমণ। দক্ষিণ মেন্দাবাড়ি, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান, চিলাপাতা রেঞ্জ। এই স্থানগুলোই একদিন ছিল শান্তিপূর্ণ, আর এখন হয়ে উঠেছে বিপদজনক। প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য, অপরূপ পরিবেশ এবং পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য হলেও, মাঝে মাঝে মানুষের জীবনকে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয় এই উদ্যান। বৃহস্পতিবার বিকেলে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের চিলাপাতা রেঞ্জে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক ঘটনাটি যেমন মানুষের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে, তেমনি এই ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে বনাঞ্চলে মানুষের প্রবেশ কতটা বিপজ্জনক হতে পারে।
চার মহিলার একটি দল বৃহস্পতিবার দুপুরে কাঠ কুড়োতে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিল। ওই মহিলারা দক্ষিণ মেন্দাবাড়ির বাসিন্দা, এবং তাদের মধ্যে রেখা বর্মন, চাঁদমণি ওঁরাও, সুখমণি লোহার এবং নিমা চাড়োয়া ছিলেন। তারা সবাই মিলে চিলাপাতা রেঞ্জে কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন, যা তাদের জীবিকার একটি অংশ। কিন্তু তাদের এই সাধারণ কাজই ভয়াবহ বিপদে পরিণত হয়, যখন একটি বুনো হাতি তাদের ওপর হামলা চালায়।
এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, আচমকা হাতিটি চার মহিলাকে আক্রমণ করে। একটি গাছের ছায়ায় তারা যখন কাঠ সংগ্রহ করছিলেন, তখনই হাতিটি তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এত দ্রুত এই ঘটনা ঘটে যে, মহিলারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাতিটি তাদের শরীর ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। মৃত্যু দ্রুত এসে যায়, এবং ঘটনাস্থলেই তিন মহিলা প্রাণ হারান। রেখা বর্মন, চাঁদমণি ওঁরাও এবং সুখমণি লোহার- এই তিন জনের মৃত্যুতে চিলাপাতা রেঞ্জ এলাকা শোকাহত হয়ে পড়ে।
তবে, অন্য একজন মহিলা, যিনি ছিল নিーマ চাড়োয়া, তিনি একেবারে শেষ মুহূর্তে প্রাণে বাঁচেন। যদিও প্রাণে বেঁচে গেলেও তার শরীরের একাধিক জায়গায় গুরুতর আঘাত লেগেছে। বর্তমানে তিনি জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন তড়িঘড়ি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের চিলাপাতা রেঞ্জ এলাকায় বনকর্মীরা এসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছেন এবং এলাকাটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এদিকে, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের সংলগ্ন এলাকায় নতুন বিপদ দেখা দিয়েছে। উত্তর ঢালকর গ্রামের আশপাশে বুনো শুয়োরের হামলা তীব্র হয়ে উঠেছে। এই বুনো শুয়োরের হামলায় স্থানীয়রা আতঙ্কিত। বাড়ির ভেতর ঢুকে শুয়োরগুলি হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের কর্মীরা এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেমে পড়েছেন, এবং ঐরাবত গাড়ি নিয়ে শুয়োর ধরা অভিযানে নামেন। তবে, শুয়োরগুলির তীব্র আক্রমণ ও আগ্রাসন মোকাবিলায় তারা এখনও সফল হতে পারেনি।
বুনো শুয়োরের হামলায় অন্তত পাঁচজন স্থানীয় বাসিন্দা আহত হয়েছেন, এবং দুটি গরুও কামড়ে আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে কিছু মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন, এবং বনদপ্তরের কর্মীদের তৎপরতার অপেক্ষায় আছেন।
এমন পরিস্থিতি, যেখানে বন্যপ্রাণীদের আক্রমণ মানুষের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেখানে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। বনাঞ্চল সংলগ্ন এলাকাগুলোর জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করা এবং স্থানীয়দের সচেতন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বনদপ্তরের কর্মীদেরও অত্যন্ত সজাগ এবং প্রস্তুত থাকতে হবে, যাতে এই ধরনের ঘটনা রোধ করা যায়।
পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য সরকারের উদ্যোগ যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণেরও সচেতনতা জরুরি। বন্যপ্রাণী এবং মানুষের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য কেবল আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণই যথেষ্ট নয়, তাদের সহাবস্থানের জন্য সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তোলাও প্রয়োজন।
প্রাকৃতিক বিপদ এবং বন্যপ্রাণীর আক্রমণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে ফেলে দেয়। তাই বনভূমি সংলগ্ন এলাকা ও স্থানগুলোতে চলাচল করার সময় আরও সতর্কতা এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বনাঞ্চল সংলগ্ন এলাকা গুলোতে পর্যটনসহ যেকোনো ধরনের কার্যক্রম চালানোর ক্ষেত্রে প্রশাসনকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।
সামাজিক সচেতনতা, বনকর্মীদের তৎপরতা, এবং প্রশাসনের কার্যকরী পদক্ষেপের মাধ্যমে বনাঞ্চল সংলগ্ন এলাকা গুলোর নিরাপত্তা বাড়ানো সম্ভব। তবেই মানুষের জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে, এবং প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যও রক্ষা পাবে।