পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের এখনও এক বছর বাকি থাকলেও ভোটার তালিকা নিয়ে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে রাজনীতির মাঠ তপ্ত হয়ে উঠেছে। গত দু’দিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পক্ষ থেকে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর দাবি। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের নেতৃত্বের বৈঠকে মমতা অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন ও বিজেপির মদতে ভোটার তালিকায় ভিনরাজ্যের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি ‘ভূতুড়ে’ ভোটারদের চিহ্নিত করাকে দলের প্রধান কাজ হিসেবে ঘোষণা করে জেলায় কোর কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।
মমতার এই অভিযোগের পরপরই পাল্টা পদক্ষেপে নামে বিজেপি। শুক্রবার শুভেন্দু অধিকারী বিধায়কদের নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে হাজির হন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে দক্ষিণবঙ্গের কিছু বুথে ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগ তুলে তিনি ১৭ লক্ষের বেশি ‘ভুয়ো’ ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার দাবি জানান। মৃত ব্যক্তিদের নাম তালিকা থেকে মুছে ফেলাসহ একাধিক দাবি নিয়ে বিজেপির প্রতিনিধি দল ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দিব্যেন্দু দাসের কাছে চিঠি জমা দেয়। তবে তারা জোর দিয়ে বলে, কোনও প্রকৃত ভোটারের নাম যেন বাদ না পড়ে।
এই উত্তেজনার মাঝে শুক্রবার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর এক্স হ্যান্ডলে বার্তা দেয়। জানানো হয়, ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য বুথ স্তরের এজেন্ট (বিএলও), সহকারী নির্বাচনী রেজিস্ট্রেশন অফিসার (এইআরও) এবং নির্বাচনী রেজিস্ট্রেশন অফিসারদের (ইআরও) সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে ৮০,৬৩৩ বিএলও, ৩,০৪৯ এইআরও এবং ২৯৪ ইআরও রয়েছেন। কমিশন প্রশ্ন তোলে, ভুয়ো ভোটারের নাম কীভাবে বিএলওদের চোখ এড়ায়? এটিকে রাজ্যের দিকে ঘুরিয়ে বার্তা বলেও মনে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এ পর্যন্ত এক লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে, যার মধ্যে মৃত্যু, স্থানান্তর বা দ্বৈত কার্ডের কারণ উল্লেখযোগ্য। তবে এই সংখ্যা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বিতর্ক তুঙ্গে। মমতার অভিযোগ, বিজেপি ভোটার তালিকায় ‘কারচুপি’ করছে। পাল্টা শুভেন্দুর দাবি, তৃণমূলই এই গোলমালের পিছনে। নির্বাচনের এক বছর আগেই এই সংঘাত ২০২৬-এর ভোটের উত্তাপের ইঙ্গিত দিচ্ছে।