বাংলায় ২৫ হাজার ভুয়ো ভোটার কার্ড পেল কমিশন

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় একটি বড়সড় গোলমাল ফাঁস হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১১টি কেন্দ্র থেকে ২৫ হাজারেরও বেশি ভোটার কার্ডে একই…

Election Commission Finds 25,000 Duplicate Voter IDs in Bengal

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় একটি বড়সড় গোলমাল ফাঁস হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১১টি কেন্দ্র থেকে ২৫ হাজারেরও বেশি ভোটার কার্ডে একই আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (Duplicate voter IDs in Bengal) থাকার ঘটনা আবিষ্কার করেছে। এই খবরে নতুন করে বিরোধীরা রাজ্যে ভুয়ো ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছে।

একই নম্বর থাকা ভোটার কার্ডে উদ্বেগ
নির্বাচন কমিশনের খোঁজে উঠে এসেছে বাগদা, মাঝিয়ালী, রাজরহাট-গোপালপুর, ক্যানিং পূর্ব, বারুইপুর পূর্ব ও পশ্চিম, কুসিয়ং, শিলিগুড়ি এবং ফালাকাটার মতো কেন্দ্রগুলিতে একই আইডেন্টিফিকেশন নম্বরের একাধিক ভোটার কার্ডের অস্তিত্ব। বিশেষ করে, সীমান্তবর্তী দুটি কেন্দ্র বাগদা দক্ষিণ (উত্তর ২৪ পরগনা) এবং মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি (দার্জিলিং) এলাকায় এই ভুয়ো কার্ডের সংখ্যা অত্যধিক বলে জানা গেছে।

   

নির্বাচন কমিশনের এক আধিকারিক বলেন, “আইডেন্টিফিকেশন নম্বর স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয় এবং এটি একক হওয়ার কথা। একই নম্বর একাধিক কার্ডে পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।”

কীভাবে খুঁজে পাওয়া গেল এই ভুয়ো কার্ড?
নির্বাচন কমিশন ভুয়ো কার্ড সনাক্ত করতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করছে। নামের সামান্য বানান পরিবর্তন বা প্রায় মিল থাকা ছবিগুলি সনাক্ত করার মাধ্যমে ডুপ্লিকেট কার্ড শনাক্ত করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হল একাধিক কার্ডে ক্লোন আইডেন্টিফিকেশন নম্বর পাওয়া।

ভুয়ো কার্ডের উৎস এবং প্রভাব
কমিশন জানিয়েছে, এই ডুপ্লিকেট কার্ডগুলি হয় মানবীয় ভুলের কারণে হয়েছে, অথবা এটি কোনো পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে, যেখানে বিদেশিদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।

খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ এবং সংশোধনী
কমিশন ১১ নভেম্বর প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় ৭.৪ কোটি ভোটারের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে। এর মধ্যে ১৬ লক্ষ নাম সংশোধন বা বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে, প্রাক-সংশোধনী পর্যায়ে ৬.২ লক্ষ নতুন নাম যোগ করা হয়েছে এবং ৪.৫ লক্ষ নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

বিরোধী দলের অভিযোগ
এই ঘটনার পর, বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন যে রাজ্যে প্রায় ১৬ লক্ষ ভুয়ো ভোটার রয়েছে। তিনি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক আরিজ আফতাবের সঙ্গে দেখা করে এই বিষয়ে তদন্তের দাবি জানান।

কী হতে পারে পরবর্তী পদক্ষেপ?
নির্বাচন কমিশন প্রতিটি কেন্দ্রের প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে এই ভুয়ো কার্ডগুলিকে শারীরিকভাবে যাচাই করে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ৫ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত হবে। তবে কমিশনের মতে, এই ধরনের ভুয়ো কার্ড অন্যান্য কেন্দ্রেও পাওয়া যেতে পারে।

এই ঘটনা নিয়ে রাজ্যের সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা রক্ষায় কমিশনের উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও, ভুয়ো ভোটারদের চিহ্নিত করতে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন।