রেশন দুর্নীতি (Ration Scam) মামলার তদন্ত নিয়ে ফের বিতর্কের মুখে কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)। বালুর জামিন শুনানিতে বিচারকের একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়ে ইডি। নদিয়ার একটি এফআইআর থেকে শুরু হওয়া তদন্তকে কেন্দ্র করে আদালত ইডির কার্যক্রম এবং যুক্তিগুলিকে কড়া ভাষায় প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
বিচারকের মন্তব্যে তদন্তের ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন
বিচারক সরাসরি ইডির আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “নদিয়ার যে এফআইআর থেকে তদন্ত শুরু করেছিলেন, সেটি একটি চুরির মামলা। তাহলে এটিকে দুর্নীতি হিসেবে দেখার ভিত্তি কী?”
তিনি আরও প্রশ্ন করেন, “যদি এটি দুর্নীতি হয়, তাহলে আজ পর্যন্ত কোনও সরকারি অফিসারকে কেন গ্রেফতার করা হয়নি? যাদের সিল পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? শর্ট সাপ্লাইয়ের প্রমাণ কি আপনাদের কাছে আছে?”
বিচারক আরও বলেন, “ডিস্ট্রিবিউটার বা মিলার চুরি করে থাকলে মন্ত্রী কীভাবে যুক্ত হলেন? মেনে নিলাম, তার আত্মীয়দের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে, কিন্তু সেই টাকা রেশন দুর্নীতির কিনা, তার প্রমাণ কোথায়? এমনও হতে পারে, এটি অন্য কোনও দুর্নীতির অর্থ।”
তদন্তের পদ্ধতি নিয়ে কঠোর নির্দেশ
বিচারক ইডিকে স্পষ্ট নির্দেশ দেন, “আপনারা যদি রেশন দুর্নীতি প্রমাণ করতে চান, তাহলে গোড়ার দিকে যান। গঙ্গাসাগর নয়, গঙ্গোত্রী থেকে তদন্ত শুরু করুন। দুর্নীতির আসল সূত্র কোথায়, সেটি খুঁজে বের করুন।”
ইডির জবাব: তদন্ত থেকে উঠে আসা তথ্য
বিচারকের প্রশ্নের উত্তরে ইডির আইনজীবীরা দাবি করেন, “আমরা চুরির মামলা তদন্ত করতে গিয়ে দুর্নীতির সূত্র খুঁজে পেয়েছি। লাইসেন্সবিহীন দোকান থেকে এনপিজি বস্তা উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু এই বস্তা চুরির কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। এটি একটি বৃহৎ চেইনের নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছিল।”
ইডি আরও জানায়, “১০০টির বেশি এফআইআর দাখিল হয়েছে। তবে সরকার আমাদের কাছে কোনও গুরুত্বপূর্ণ নথি সরবরাহ করেনি। আমরা গঙ্গাসাগর থেকে গঙ্গোত্রী পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। তদন্তের সময় দেখতে পেয়েছি, গমই হচ্ছে সেই ‘হিমালয়’, যেখান থেকে কোটি কোটি টাকা অর্জন করা হয়েছে।”
বিচারকের প্রতিক্রিয়া: আরও প্রমাণের প্রয়োজন
ইডির বক্তব্যের পর বিচারক মন্তব্য করেন, “আপনাদের তদন্তের পদ্ধতিতে সুনির্দিষ্টতা নেই। প্রাথমিক তথ্য থেকে শুরু করে একটি নির্ভুল ধারা ধরে এগোতে হবে। শুধু অভিযোগ বা অনুমান নয়, প্রমাণ দেখাতে হবে।”
তদন্তের চাপে ইডি
বিচারকের কঠোর মন্তব্য ইডির ওপর নতুন চাপ তৈরি করেছে। তদন্তের প্রায় দেড় বছরের পরেও রেশন দুর্নীতির মূল সূত্র ধরে কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারায় কেন্দ্রীয় সংস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রেশন দুর্নীতি মামলায় ইডির তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে আদালতের কঠোর প্রশ্ন শুধু সংস্থাটির কার্যক্রম নয়, সমগ্র মামলাটিকেই একটি নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। তদন্তে আরও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ও স্বচ্ছতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন বিচারক। ইডি যদি দুর্নীতির আসল সূত্র খুঁজে বের করতে না পারে, তাহলে তদন্ত কতদূর এগোবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।