সাইকেল মেরামত করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন বলে পরিচিত ছিলেন শেখ জহিরুল আলি। এলাকায় তিনি ছিলেন একেবারে সাধারণ একজন মানুষ। কিন্তু ইদানীং তাঁর বিলাসবহুল জীবনযাপন ও হঠাৎ গড়ে ওঠা তিনতলা প্রাসাদসম বাড়ি ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। সেই সন্দেহকে এবার আরও গাঢ় করল ইডির হানা।
গতকাল সকালে ইডি আধিকারিকরা বিশাল বাহিনী নিয়ে হাজির হন শেখ জহিরুল আলির (Sheikh Jahirul Ali) বাড়িতে। শুরু হয় তল্লাশি অভিযান। অভিযানে জহিরুলের বাড়ি, পারিবারিক গ্যারাজ, এমনকি ব্যক্তিগত গাড়িতেও তল্লাশি চালান আধিকারিকরা।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, তল্লাশির সময় এখনও পর্যন্ত প্রায় ১২ লক্ষ টাকা নগদ উদ্ধার হয়েছে। টাকা গোনার কাজ এখনও চলছে। একাধিক আলমারি, বিছানার নিচ, এমনকি রান্নাঘর ও বাথরুম পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, শেখ জহিরুল আলির নামে বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে একাধিক জমি, বিলাসবহুল গাড়ি এবং অন্যান্য সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। একটি সূত্র অনুযায়ী, জহিরুলের নামেই আছে একটি SUV ও একটি দামি বাইক, যা তাঁর পরিচিত জীবনের সঙ্গে একেবারেই বেমানান।
কে এই শেখ জহিরুল আলি?
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শেখ জহিরুল আলি (Sheikh Jahirul Ali) দীর্ঘদিন ধরে সাইকেল সারাইয়ের কাজ করতেন। তাঁর একটি ছোট গ্যারাজ ছিল রাস্তার ধারে। তাতে বসেই দিনে দু’বেলা খাওয়ার মতো রোজগার করতেন তিনি। তবে গত কয়েক বছরে হঠাৎ করেই তাঁর আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। তিনি গড়ে তোলেন একটি তিনতলা বাড়ি, পরিবারের জন্য কেনেন গাড়ি।
প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে এই অল্প সময়ের মধ্যেই এত বিপুল সম্পদ জমাতে পারলেন তিনি? এই বিষয়ে ইডি-র তরফে এখনো অফিসিয়াল বিবৃতি দেওয়া হয়নি, তবে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে, কালো টাকা পাচার, তছরুপ বা কোনও বেআইনি চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন জহিরুল। কিছু সূত্রের দাবি, সীমান্ত এলাকায় কারবার বা ভুয়ো কাগজপত্রের মাধ্যমে আয় করার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এলাকায় চাঞ্চল্য, প্রতিবেশীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
শেখ জহিরুল আলির বিরুদ্ধে এই তল্লাশির খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। প্রতিবেশীরা অনেকেই হতবাক। কেউ কেউ বলছেন, “আমরা তো ভাবতাম, উনি সৎভাবে পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন করেন। কখনও ভাবিনি এমন কিছুর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।”
আবার কেউ কেউ বলছেন, “বাড়ির চেহারা দেখেই সন্দেহ হয়েছিল। এত দামি গাড়ি, এমন বিলাসবহুল ঘর! একটা সাইকেল মিস্ত্রি এত টাকা পায় কোথা থেকে?”
ইডির তদন্ত চলছেই
ইডি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, টাকা গোনার কাজ এখনও চলছে। বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রাখা অর্থ এবং মূল্যবান সামগ্রীর খোঁজে চলছে সূক্ষ্ম তল্লাশি। পাশাপাশি, জহিরুল ও তাঁর পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, সম্পত্তির দলিল, আর্থিক লেনদেন এবং মোবাইল ফোনও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই ঘটনার জেরে নতুন করে আলোচনায় এসেছে গ্রামাঞ্চলে গোপনে বেড়ে ওঠা কালো টাকার সাম্রাজ্য। কীভাবে সাধারণ জীবনের আড়ালে লুকিয়ে থাকে অপরাধের জাল, শেখ জহিরুল আলির ঘটনা তারই একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে রইল।