আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে নির্বাচন কমিশনের (Trinamool) একটি নির্দেশিকা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস তীব্র বিরোধিতা জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশন হাইরাইজ ভবনগুলোতে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা তৃণমূল কংগ্রেস স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। দলের যুক্তি, বেসরকারি জায়গায় ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা যায় না।
অন্যদিকে, বিরোধীরা অভিযোগ করেছে যে তৃণমূল কংগ্রেস এতদিন ধরে হাইরাইজের বাসিন্দাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, শহরাঞ্চলের হাইরাইজ ভবনগুলোতে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে, যাতে ভোটারদের সুবিধা হয় এবং ভোটদানের হার বৃদ্ধি পায়।
কমিশনের মতে, হাইরাইজে বসবাসকারী বাসিন্দারা প্রায়ই দূরবর্তী ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার অসুবিধার কারণে ভোটদান থেকে বিরত থাকেন। তাই, ভোটারদের সুবিধার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে, তৃণমূল কংগ্রেস এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেছে যে হাইরাইজ ভবনগুলো বেসরকারি সম্পত্তি, এবং সেখানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা আইনগত ও ব্যবহারিকভাবে সম্ভব নয়।
তৃণমূল নেতা এবং রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, “বেসরকারি জায়গায় ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা যায় না। এটি নির্বাচনের নিরপেক্ষতা এবং নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে দেয়। আমরা চাই ভোটকেন্দ্রগুলো সরকারি জায়গায় স্থাপিত হোক, যাতে কোনো বিতর্ক না হয়।”
বিরোধী দল বিজেপি এই বিষয়ে তৃণমূলের উপর তীব্র সমালোচনা করেছে। বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়া দাবি করেছেন, “তৃণমূল কংগ্রেস হাইরাইজের বাসিন্দাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায়। এই বাসিন্দারা প্রায়ই শিক্ষিত এবং সচেতন ভোটার, যারা তৃণমূলের পক্ষে ভোট না দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
তাই তারা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে।” তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত ভোটারদের সুবিধার জন্য, এবং তৃণমূলের বিরোধিতা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার প্রচেষ্টা মাত্র।”
কংগ্রেস নেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, “তৃণমূলের এই বিরোধিতা প্রমাণ করে যে তারা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না। হাইরাইজের বাসিন্দাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব, এবং তৃণমূলের এই বিরোধিতা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর আঘাত।” তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান যেন এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়।
তৃণমূলের পাল্টা যুক্তি হলো, হাইরাইজ ভবনগুলো বেসরকারি সম্পত্তি হওয়ায় সেখানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করলে নিরাপত্তা ও নিরপেক্ষতার প্রশ্ন উঠতে পারে। তৃণমূল নেতা পার্থ ভৌমিক বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি না, তবে আমরা চাই ভোটকেন্দ্রগুলো এমন জায়গায় হোক যা সরকারি এবং সবার জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য।
হাইরাইজে ভোটকেন্দ্র করলে বেসরকারি মালিকদের হস্তক্ষেপের আশঙ্কা থাকে।” তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। যদি ভোটকেন্দ্রের জায়গা নিয়ে বিতর্ক হয়, তবে তা নির্বাচনের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।”
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে হাইরাইজে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ভোটারদের সুবিধার জন্য। পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল বলেন, “আমরা ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াচ্ছি, যাতে প্রতি বুথে ভোটারের সংখ্যা ১,২০০-এর মধ্যে সীমিত থাকে।
হাইরাইজে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে আমরা ভোটারদের সুবিধা নিশ্চিত করতে চাই।” তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ পরীক্ষা করে দেখা হবে, এবং ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়ার সময় দেওয়া হয়েছে।
এই বিতর্কের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তৃণমূলের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারের ইশারায় কাজ করছে এবং তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। অন্যদিকে, বিজেপি দাবি করছে যে তৃণমূল ভোটার তালিকায় কারচুপি এবং ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের মাধ্যমে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে চায়।
এই ঘটনা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এই বিতর্কের ফলে রাজ্যের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হাইরাইজে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে তা শহরাঞ্চলের ভোটারদের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে।
GDP বৃদ্ধিতে বিশ্বের মধ্যে শীর্ষে মোদীর ভারত
তবে তৃণমূলের বিরোধিতা এই প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে। আগামী দিনে নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই ইস্যু নিয়ে আরও আলোচনা ও বিতর্কের সম্ভাবনা রয়েছে।