শ্রীরামপুরে (Shrerampur) এক ভয়াবহ ঘটনার (incident) পর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Bandyopadhyay)। সম্প্রতি শ্রীরামপুরে এক বাড়িতে একটি ডেলিভারি বয় এক তরুণীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করলে ঘটনাটি দ্রুত পুলিশকে জানানো হয় এবং অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন, যেখানে তিনি সকল অভিভাবককে সন্তানদের নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
শ্রীরামপুরে ঘটনার বিবরণঃ
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শ্রীরামপুরের (Shrerampur) এক পরিবার একটি অনলাইন অ্যাপের মাধ্যমে পোশাক অর্ডার করেছিল। অর্ডারের ডেলিভারি দিতে একটি ডেলিভারি বয় বাড়িতে পৌঁছায়। কিন্তু, ওই সময় বাড়িতে একমাত্র ছিল একটি নাবালিকা। ডেলিভারি বয় এসে জানতে চায়, বাড়িতে কেউ আছেন কি না। ওই তরুণী জানায় যে, বাড়িতে কেউ নেই, এবং সে ডেলিভারি বয়কে বলে যে পরবর্তীতে আসতে। কিন্তু, ডেলিভারি বয় এক অদ্ভুত প্রস্তাব দেয়। সে জানায়, “ওটিপি বলতে পারলে অর্ডার ডেলিভারি করে চলে যাবে।”
নাবালিকা জানায়, তার কাছে ওটিপি ছিল না, তবে ডেলিভারি বয় তাকে বলে যে, “ইমেলে গিয়েছে ওটিপি।” তাই, ওই তরুণী কম্পিউটারে ইমেইল চেক করতে গেলে, ডেলিভারি বয় তার সঙ্গে অভব্য আচরণের চেষ্টা করে। এমনকি, সে ওই নাবালিকার সঙ্গে শারীরিকভাবে অশালীন আচরণ করতে চায়। এই সময় নাবালিকা দ্রুত মাকে ফোন করে সমস্ত ঘটনা জানায় এবং মায়ের সহযোগিতায় তারা রাতেই থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করে।
পুলিশের তৎপরতা এবং গ্রেপ্তারঃ
শ্রীরামপুর থানার পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করে। পুলিশ ডেলিভারি বয়কে শনাক্ত করে এবং রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানিয়েছে যে, গ্রেপ্তার হওয়া যুবক ডেলিভারি সংস্থার কর্মী ছিলেন। এই ঘটনায় পকসো (পেটিকনট্রোল সেক্সুয়াল অফেন্সেস অ্যাগেনস্ট চিলড্রেন) আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার, অভিযুক্তকে শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হবে।
এদিকে, এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “আপনার সন্তান যদি একা থাকে, তাহলে নিশ্চিত করুন যে কোনও ডেলিভারি কর্মীকে আপনার বাড়ির ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। আমি শ্রীরামপুরে একটি উদ্বেগজনক ঘটনার বিষয়ে জানতে পেরেছি, যেখানে এক ডেলিভারি বয় বাড়িতে ঢুকে এক তরুণীকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেছিল। সৌভাগ্যবশত, শ্রীরামপুর থানার পুলিশ দ্রুত কাজ করে ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত এবং গ্রেপ্তার করেছে।”
সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে সতর্কতাঃ
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেছেন, “এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, আমাদের সমাজে এমন ঘটনা ঘটছে। যদি কোনও পরিবারের সন্তান একা থাকে, তাহলে অভিভাবকদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। আপনার সন্তানদের সুরক্ষিত রাখতে প্রতিটি পদক্ষেপ অবলম্বন করুন। এই ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে, তার জন্য আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।”
এছাড়াও, তিনি সকলকে আহ্বান জানিয়েছেন যে, “যতটা সম্ভব সতর্ক থাকুন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ান এবং আপনার সন্তানদের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটান।”
শ্রীরামপুরের ঘটনায় সামাজিক প্রতিক্রিয়াঃ
এই ঘটনা শ্রীরামপুরে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। পুরো এলাকায় এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা চলছে এবং অভিভাবকরা নিজের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে এই ঘটনার নিন্দা করেছেন এবং সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি, স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন, যার ফলে অভিযুক্ত দ্রুত গ্রেপ্তার হতে পেরেছে।
এছাড়াও, কিছু স্থানীয় বাসিন্দা বলেছেন যে, এই ধরনের ঘটনা আবারও প্রমাণ করেছে যে, আমাদের সমাজে শিশু ও মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে কতটা সচেতন হওয়া প্রয়োজন। শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাড়া-মহল্লা এবং পরিবারকে একযোগে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
শ্রীরামপুরে (Shrerampur) ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ ঘটনা একদিকে যেমন পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, তেমনি এটি আমাদের সামাজিক সচেতনতার একটি বড় উদাহরণও হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যখন সন্তানরা একা থাকে, তখন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভিভাবকদের আরো বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। সরকার এবং পুলিশ প্রশাসনকে আরও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি, সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে সজাগ এবং সচেতন হতে হবে, যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।
এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং একে অপরকে সতর্ক করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আমাদের সমাজে এমন কোনো অশান্তি বা অঘটন না ঘটে।