বদভ্যাসে’ ডুবে তরুণ প্রজন্ম! সৎছেলের মৃত্যুতে ব্যথিত ও কড়া বার্তায় দিলীপ

সম্প্রতি সৎছেলের অকালমৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর তিনি প্রকাশ্যে বর্তমান যুবসমাজের নেশার প্রতি আসক্তি ও…

Dilip Ghosh Visits Delhi BJP Headquarters, Discusses Preparations for 2026 West Bengal Elections"

সম্প্রতি সৎছেলের অকালমৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর তিনি প্রকাশ্যে বর্তমান যুবসমাজের নেশার প্রতি আসক্তি ও আত্মধ্বংসী প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে একাধারে পিতৃস্নেহহীনতার যন্ত্রণা, অন্যদিকে সমাজের বর্তমান চিত্র নিয়ে তীব্র হতাশা।

তিনি বলেন, “পুত্রসুখ পাইনি, কিন্তু শোক পেতে হল।” এই বক্তব্যেই ফুটে উঠেছে তাঁর অন্তরের যন্ত্রণা। কিন্তু তিনি শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতির কথা বলেই থেমে থাকেননি। সমাজের প্রতি, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা থেকেই দিলীপবাবু কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন বর্তমান প্রজন্মের কিছু ‘বদভ্যাস’-এর।

   

দিলীপ ঘোষের মতে, আজকের যুবসমাজ একটি বিপজ্জনক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। মাদক, নেশা, মদ্যপান, ড্রাগস ইত্যাদির সহজলভ্যতা এবং ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবে এক শ্রেণির তরুণ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। তাঁদের জীবনের লক্ষ্য হারিয়ে যাচ্ছে, আত্মনিয়ন্ত্রণে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এর ফলেই অনেক তরুণ অল্প বয়সেই হারিয়ে ফেলছে জীবনের গতিপথ।

তিনি আরও বলেন, “নেশা একবার জীবনে প্রবেশ করলে সেটা শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। সৎছেলের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা কোনো বাবা-মা যেন দেখতে না পায়।”

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ নিয়ে দিলীপবাবু কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন। তিনি বাবা-মা এবং পরিবারকে আরও দায়িত্ববান হতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “শুধু পড়াশোনা আর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবলেই হবে না, সন্তান কোন বন্ধুদের সঙ্গে মিশছে, কী করছে, মনের অবস্থাটা কেমন — এসব নিয়েও খেয়াল রাখা দরকার। স্নেহের সঙ্গে শৃঙ্খলার ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।”

Advertisements

তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, সমাজের ভিত যদি মজবুত রাখতে হয়, তাহলে নতুন প্রজন্মকে সুস্থ, সচেতন এবং আত্মনিয়ন্ত্রিত করে তুলতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও এর জন্য সচেতনতা গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। বিভিন্ন স্কুল-কলেজে সচেতনতা কর্মসূচি চালানো, কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা রাখা এবং সহমর্মিতাপূর্ণ আচরণে ছাত্রছাত্রীদের মানসিক বিকাশে সাহায্য করার কথাও বলেন তিনি।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক মহলেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। দিলীপ ঘোষের এই বক্তব্য শুধু একজন রাজনীতিবিদের কথা নয়, বরং একজন অভিভাবকের যন্ত্রণার প্রকাশ বলেই অনেকেই মনে করছেন। তাঁর এই বক্তব্য আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে, প্রযুক্তির দুনিয়ায় আমরা যতই এগিয়ে যাই না কেন, মূল্যবোধ, শৃঙ্খলা এবং মানবিকতার অভাব আমাদের সমাজকে ভেতর থেকে গিলে ফেলছে।

সব শেষে দিলীপ ঘোষ বলেন, “আমার যন্ত্রণাকে আমি সমাজের জন্য কাজে লাগাতে চাই। যদি আমার অভিজ্ঞতা অন্য কাউকে সচেতন করতে পারে, তাহলে আমার এই শোক কিছুটা হলেও সার্থক হবে।”

এই বার্তা শুধু একটি রাজনৈতিক মন্তব্য নয়, বরং বর্তমান সমাজের এক কঠোর বাস্তবচিত্র — যার প্রতিকার আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই সম্ভব।