বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) বক্তব্যের ঝাঁঝ ফের চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। একদিকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদ, অন্যদিকে বাংলাদেশকে ইসরায়েলের মতো কড়া পদক্ষেপের হুমকি—দুই দিক থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এসেছেন তিনি। উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা বাজারে এক দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দিলীপের এই মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে নানান প্রতিক্রিয়া।
দিলীপের মন্তব্য
শুক্রবার গাইঘাটা বাজারে বিজেপির সভায় বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর নির্যাতন নিয়ে সরব হন দিলীপ। তাঁর বক্তব্য, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে হিন্দুদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। অথচ আজ সেই হিন্দুদেরই সেদেশে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। আমরা কি হাত গুটিয়ে বসে থাকব?” এরপরেই দিলীপের হুঁশিয়ারি, “বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হলে ভারত চুপ করে বসে থাকবে না। প্রয়োজনে ইসরায়েলের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সরকার তার পথে চলবে, আমরা সাধারণ মানুষ হিসেবে পরিস্থিতি সামলে নেব।”
Also Read | শিকারি চিতার উপদ্রপে নাজেহাল, অবশেষে খাঁচাবন্দী করল ডুয়ার্সের গ্রামবাসীরা
সীমান্ত এলাকার হুঁশিয়ারি
গাইঘাটা, যা বাংলাদেশের সীমান্তের খুব কাছেই অবস্থিত, সেখানে দাঁড়িয়ে এই হুঁশিয়ারি দেওয়ার অর্থ নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চর্চা। দিলীপের কথায় উঠে এসেছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের প্রসঙ্গ। গত এক বছর ধরে প্যালেস্তাইন, গাজা, এবং লেবাননে ইসরায়েল যে কঠোর সামরিক অভিযান চালিয়েছে, তার রেশ এখনো রয়ে গেছে। সেই প্রসঙ্গ টেনে দিলীপের মন্তব্য, “ইসরায়েল যেমন তার স্বার্থ রক্ষায় কাউকে রেয়াত করে না, আমরাও তেমন হব।”
সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি
গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর হামলা এবং নির্যাতনের অভিযোগ আন্তর্জাতিক মহলে চর্চার বিষয় হয়েছে। মন্দিরে আক্রমণ, বাড়িঘরে লুঠপাট, এবং প্রাণঘাতী হামলার মতো ঘটনা বারবার উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমের পাতায়। দিলীপ ঘোষ এই বিষয়টি সামনে এনে দাবি করেছেন, “যে দেশের স্বাধীনতার জন্য হিন্দুরা জীবন দিয়েছেন, আজ তাদেরই ওপর অত্যাচার হচ্ছে। ভারত কখনোই এই ধরনের ঘটনা মেনে নেবে না।”
Also Read | পাকা ধানে মই দিচ্ছে বৃষ্টি, ক্ষতির আশঙ্কায় চাষিরা
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমালোচনা। তৃণমূলের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, “দিলীপ ঘোষের বক্তব্য শুধুই লোক দেখানো। বাস্তবে বিজেপি সরকার সংখ্যালঘুদের জন্য কিছুই করেনি। বরং তারা সব সময় বিভাজনের রাজনীতি করে এসেছে।”
বামেরাও এই ইস্যুতে সরব হয়ে জানিয়েছে, “বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। এমন মন্তব্য শুধু দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা তৈরি করবে।”
সিএএ এবং নাগরিকত্ব ইস্যু
দিলীপ ঘোষ আরও বলেন, “বাংলাদেশের হিন্দুরা যদি ভারতে আসতে চান, তবে আমরা তাদের নাগরিকত্ব দিতে প্রস্তুত। সিএএ (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন)-এর মাধ্যমে তাদের সুরক্ষা দেওয়া হবে।” যদিও ২০১৪ সালের পরে যারা এসেছেন, তাদের সিএএ-র মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা তিনি দেননি।
Also Read | ফের বিতর্কে হুমায়ুন কবীর, মৃত্যুর আশঙ্ক!
ইসরায়েল প্রসঙ্গ
ইসরায়েলের মতো কড়া পদক্ষেপের প্রসঙ্গ টেনে দিলীপ ঘোষ কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। ইসরায়েল তার নিরাপত্তা রক্ষায় প্রায়শই প্রতিবেশী দেশগুলিতে সামরিক অভিযান চালায়। দিলীপের মন্তব্য, “বাংলাদেশের উপর যদি আক্রমণাত্মক মনোভাব না পাল্টায়, তবে ভারত ইসরায়েলের মতো পথ নিতে পারে।”
উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা
দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্য দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান। কিন্তু এই ধরনের মন্তব্য দুই দেশের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।
জনপ্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের রক্ষার দাবিতে দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বিজেপি সমর্থকদের মতে, “দিলীপ যা বলেছেন, তা পুরোপুরি ঠিক। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।” অন্যদিকে, বিরোধী শিবিরের মতে, “এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক লাভ তোলার চেষ্টা করছেন।”
দিলীপ ঘোষের মন্তব্য বিতর্কিত হলেও সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক মহল এবং দুই দেশের সরকারের পক্ষ থেকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তবে দিলীপ ঘোষের এই ইসরায়েল প্রসঙ্গ শুধুই হুঁশিয়ারি নাকি এর পেছনে রয়েছে কোনো গভীর রাজনৈতিক বার্তা, তা সময়ই বলবে।