‘‘বাধা দিলে মাড়িয়ে যাব”—রামনবমীতে চমকালেন দিলীপ ঘোষ

‘বুক কাঁপলে আজ রাস্তায় বেরোবেন না, হার্ট অ্যাটাক হতে পারে’—রামনবমীর দিনে মেদিনীপুরে এমনই চমকপ্রদ মন্তব্য করে রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি…

Dilip Ghosh Sparks Political Debate with Ram Navami Bike Rally in Midnapore

‘বুক কাঁপলে আজ রাস্তায় বেরোবেন না, হার্ট অ্যাটাক হতে পারে’—রামনবমীর দিনে মেদিনীপুরে এমনই চমকপ্রদ মন্তব্য করে রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। রবিবার সকালে ‘ঘরের মাঠ’ মেদিনীপুরে বাইক হাঁকিয়ে রামনবমীর মিছিলে অংশ নিয়ে তিনি যেন নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছেন। মাথায় গেরুয়া পাগড়ি, চোখে কালো সানগ্লাস আর গলায় জয় শ্রীরামের হুঙ্কার—দিলীপের এই রূপ কি তাঁর রাজনৈতিক ‘কামব্যাক’-এর ইঙ্গিত? এই প্রশ্ন এখন ঘুরছে দলের ভিতরে-বাইরে।

রবিবার সকালে মেদিনীপুরের গোপনন্দিনী মন্দিরে রামনবমীর পুজো দিয়ে শুরু করেন দিলীপ। এরপর বুলেট মোটরবাইকে চড়ে মেদিনীপুর সদর ব্লকের ধেড়ুয়া বাজারে পৌঁছে মিছিলে যোগ দেন। তবে তার আগে, সকালের হাঁটার সময় তিনি যে মন্তব্য করেছিলেন, তা রীতিমতো হুঁশিয়ারির সুরে ভরা। তিনি বলেন, “জয় শ্রীরাম বললে যাঁদের বুক দুড়দুড় করে, তাঁরা আজ রাস্তায় বার হবেন না। হার্ট অ্যাটাক করতে পারে। কারণ সারা সমাজ আজ জয় শ্রীরাম বলছে। আর তা প্রতি বছর বাড়ছে। সবটাই রামের ইচ্ছেতেই হচ্ছে, হবেও।” এর আগে শনিবারও পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা কেশিয়াড়ি মোড় থেকে একটি শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে তিনি বলেছিলেন, “রামনবমীতে কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে মাড়িয়ে চলে যাবে।” পুলিশ বাধা দিতে গেলে বুলডোজার চালানোর হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন তিনি।

   

দিলীপ ঘোষের এই ঝাঁঝালো ভূমিকা রাজনৈতিক মহলের একাংশের নজর কেড়েছে। বিশেষ করে ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের এক বছর আগে তাঁর এই সক্রিয়তা অনেকের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। অতীতে রামনবমীতে দিলীপের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। ২০২৩ সালে খড়্গপুরে তিনি হাতে গদা নিয়ে মিছিল করেছিলেন। ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটের আবহে রামনবমী কেটেছিল, তবে এবার বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে তাঁর এই উদ্যমকে অনেকে ‘প্রত্যাবর্তনের প্রচেষ্টা’ হিসেবে দেখছেন। ২০২৪ সালে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে টিকিট না পেয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুরে প্রার্থী হয়েছিলেন দিলীপ, কিন্তু সেখানে হেরে যান। এরপর দলের কোনও পদে না থাকলেও, তিনি সাংগঠনিক কাজে সক্রিয় রয়েছেন। মেদিনীপুরে রামনবমীর এই মিছিল কি তবে তাঁর পুরনো ঘাঁটিতে প্রভাব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা?

রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য দিলীপের এই বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁদের কটাক্ষ, “ওঁর কথাবার্তা নিয়ে তো তাঁরই দলকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে অতীতে। একাধিক উদাহরণ রয়েছে। এখন তিনি দলের কোনও পদে নেই। তাই লাইমলাইটে থাকার জন্য এ সব বলছেন। সহানুভূতি রইল।” তৃণমূলের এক নেতা আরও বলেন, “মেদিনীপুরে বিজেপির অবস্থা এখন দুর্বল। দিলীপ ঘোষের এই মিছিল দিয়ে কিছু হবে না। জনগণ তৃণমূলের উন্নয়নের পক্ষে।”

অন্যদিকে, বিজেপির অন্দরে দিলীপের এই ভূমিকা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একাংশ মনে করছে, তাঁর এই সক্রিয়তা দলের কর্মীদের মনোবল বাড়াতে পারে। তবে আরেকটি অংশের আশঙ্কা, তাঁর বিতর্কিত মন্তব্য আবারও দলের জন্য বিড়ম্বনা তৈরি করতে পারে। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে মেদিনীপুরে তৃণমূলের জুন মালিয়ার কাছে অগ্নিমিত্রা পালের হারের পর এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রভাব কিছুটা কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দিলীপের ‘রামনবমী শো’ কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে।

Advertisements

রামনবমীতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শোভাযাত্রা বের হলেও, মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষের উপস্থিতি আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। তাঁর সমর্থকদের মতে, “দিলীপদা মেদিনীপুরের মাটির মানুষ। তিনি থাকলে কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ বাড়ে।” তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, “দিলীপ ঘোষের এই ঝাঁঝালো ভূমিকা তাঁর ব্যক্তিগত ইমেজ বাড়াতে পারে, কিন্তু দলের জন্য কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা ভবিষ্যৎই বলবে।”

এদিকে, রামনবমীর দিনে শান্তিপূর্ণভাবে শোভাযাত্রা করার জন্য পুলিশের তরফে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গত বছর রামনবমীতে রাজ্যের কিছু এলাকায় অশান্তির ঘটনা ঘটেছিল, যা নিয়ে বিতর্কও হয়েছিল। এবার সেই পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসন সতর্ক ছিল। দিলীপ ঘোষের মিছিল শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে, তবে তাঁর মন্তব্য রাজনৈতিক তরজাকে আরও উসকে দিয়েছে।

সব মিলিয়ে, রামনবমীর এই দিনে মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষের ‘বাইক-যাত্রা’ ও হুঁশিয়ারি শুধু ধর্মীয় উৎসবের মাত্রা বাড়ায়নি, রাজনৈতিক সমীকরণেও নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আগামী দিনে তাঁর এই ভূমিকা বিজেপির কৌশলে কী প্রভাব ফেলবে, সেটাই এখন দেখার।