কলকাতা: ২১ জুলাই মানেই ধর্মতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবসের জমায়েত। রাজনীতির ক্যালেন্ডারে এই দিনটির গুরুত্ব আলাদা। কিন্তু এ বছর, একই দিনে শহিদদের স্মরণে পাল্টা কর্মসূচি করল রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি। আর সেই মঞ্চে চমক দিয়ে উপস্থিত প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (dilip ghosh reaction on 21 july)।
দিলীপকে নিয়ে জল্পনা
দীর্ঘদিন ধরেই তাঁকে নিয়ে চলছিল নানা জল্পনা। দলের ভিতরে তাঁর গুরুত্ব কমছে, দিল্লিতে পদ হারানোর পর রাজ্য রাজনীতিতেও কি তিনি পিছিয়ে পড়ছেন, এইসব প্রশ্ন ঘুরছিল রাজনৈতিক মহলে। কেউ কেউ তো তাঁকে দলবদলের দ্বারপ্রান্তেও দেখতে শুরু করেছিলেন। তবে ২১ জুলাইয়ের সকালে নিজস্ব স্টাইলে সেই সব জল্পনায় ছেঁদ করা ভাষায় দিলীপ ঘোষ জানিয়ে দিলেন, ‘তৃণমূল এবার শহিদ হতে চলেছে। এটাই ওদের শেষ শহিদ দিবস।’
খড়্গপুরে ‘শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি সভা’-য় ছিলেন দিলীপ
সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরে আয়োজিত ‘শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি সভা’-য় উপস্থিত ছিলেন দিলীপ ঘোষ। এই দিন তৃণমূলের শহিদ দিবসের পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে এই সভার আয়োজন করে বিজেপি। মূলত দিলীপ ঘোষের প্রথম নির্বাচিত এলাকা খড়্গপুরেই এই সভার মাধ্যমে বিজেপির ‘আদি কর্মী’দের একজোট করার চেষ্টা চলছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।
সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, “বিজেপি একুশে জুলাই শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি সভা করছে—এটা কি চমক নয়? তৃণমূল তো ডিম-ভাত খেয়ে নাটক করে এদিন। শহিদদের নিয়ে যে অনুষ্ঠান, সেই শহিদরাই তো কংগ্রেসের! তৃণমূলের সঙ্গে তাদের কী সম্পর্ক?”
নিহত বিজেপি কর্মীদের শ্রদ্ধা
তিনি আরও বলেন, “বিজেপির বহু কর্মী এই বাংলায় রাজনৈতিক লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন। তাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতেই এই কর্মসূচি। শহিদ তো আসলে আমাদের! আর আমার বিশ্বাস, এবার তৃণমূল নিজেরাই শহিদ হয়ে যাবে। ২০২৬ সালে সরকার যাবে, শহিদ হবে তৃণমূল।”
এই মন্তব্যে রাজনীতির জমি উত্তপ্ত হতে বাধ্য। দীর্ঘদিন নিজেকে আড়ালে রাখার পর ফের দিলীপ ঘোষের এমন সরাসরি আক্রমণ ও বিকল্প শহিদ দিবস আয়োজনকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে রাজনৈতিক মহল। শুধু কর্মসূচি নয়, দিল্লিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর ফের রাজ্যে দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হচ্ছেন দিলীপ, এমন ইঙ্গিতও মিলছে ঘনিষ্ঠ সূত্রে।
একদিকে ধর্মতলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ, অন্যদিকে খড়্গপুরে দিলীপ ঘোষের বিকল্প শহিদ সম্মান সভা ২০২৫-এর ২১ জুলাই যেন রাজনীতির দু’টি বিপরীত মেরু স্পষ্ট করে দিল।