কলকাতা: রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জল্পনা অব্যাহত। কখনও শাসকদলের সঙ্গে তাঁর ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ’ সম্পর্কের ইঙ্গিত, কখনও বা নতুন দল গঠনের সম্ভাবনা রাজনৈতিক মহলে এই জল্পনা ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা সমীকরণ। এই পরিস্থিতিতেই শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট বার্তা দিলেন সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য: “দিলীপ ঘোষ ছিলেন, আছেন, এবং থাকবেন বিজেপিতেই। উনি কোথাও যাননি যে তাঁকে ফিরে আসতে হবে।”
বিজেপির কর্মসূচিতে অনুপস্থিত দিলীপ
গত কিছু সপ্তাহ ধরেই দিলীপ ঘোষ বিজেপির কর্মসূচিতে অনুপস্থিত। দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে বসে তাঁকে আলোচনায় মেতে থাকতে দেখা যায় যা দলের অন্দরে নানা প্রশ্ন তুলেছিল। তদুপরি, রাজ্য সভাপতির দায়িত্বগ্রহণ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনায় দিলীপ ঘোষের অনুপস্থিতিও জল্পনাকে আরও ঘনীভূত করে।
এই পটভূমিতেই শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, “দিলীপ ঘোষ কোনও সেলেবেল কমোডিটি নন। তাঁকে যেখানে দলের প্রয়োজন, সেখানেই কাজে লাগানো হবে। তিনি অন্য কোথাও যাবেন না, যেতে পারবেন না। ‘জায়ে তো জায়ে কাহা’…”
শমীকের এই মন্তব্য যেন দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করল৷ দিলীপ ঘোষ এখনও বিজেপির অংশ, এবং তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দলেরই।
জল্পনার উৎস কোথা থেকে? Dilip Ghosh political future
দীর্ঘদিন ধরে দিলীপ ঘোষের কিছু পদক্ষেপ এবং বক্তব্য দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর দূরত্বের ইঙ্গিত দিয়েছে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং পরবর্তী সময়ে দলের কর্মসূচি থেকে সরে থাকা এসবই তাঁর দলত্যাগের সম্ভাবনা ঘিরে গুঞ্জন বাড়িয়েছে।
সম্প্রতি দিলীপ ঘোষ নিজেও বলেছিলেন, “কল্পনা করতে তো পয়সা লাগে না। অনেকেই করছে। ২১ তারিখ পর্যন্ত কল্পনার ডেট দেওয়া হয়েছে। দিলীপ ঘোষ মার্কেটে আছে।”
কিন্তু ‘যেতে পারবেন না’ মানে কী?
শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্যে সবচেয়ে আলোচিত অংশ,“যেতে পারবেন না”৷ এই নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে নতুন জল্পনা। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এটি একপ্রকার ‘হুঁশিয়ারি’ বা দলীয় সীমারেখা টেনে দেওয়ার বার্তা। কেউ কেউ মনে করছেন, এই মন্তব্যে দিলীপ ঘোষের ওপর দলের ‘নিয়ন্ত্রণ’ বজায় রাখার ইঙ্গিতও রয়েছে।
একদিকে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব দিলীপ ঘোষকে এখনও দলের সম্পদ হিসেবে দেখাতে চাইছে, অন্যদিকে দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখার কৌশলগত প্রয়াসও জারি রয়েছে। এই অবস্থায় দিলীপ ঘোষ আদৌ সক্রিয় রাজনীতিতে বিজেপির হয়ে ফিরবেন কি না, না কি এই ‘নিষ্ক্রিয়তা’ তাঁর নতুন কৌশল, তা সময়ই বলবে।