কলকাতা: রাজ্য রাজনীতিতে ফের আলোচনার কেন্দ্রে রাজ্য বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আলিপুরদুয়ারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ না পাওয়ার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই, এবার অমিত শাহের কলকাতা সফরেও অনুপস্থিত প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির নাম। দলের অভ্যন্তরেই প্রশ্ন উঠছে—রাজ্য কমিটির সদস্য ও কোর কমিটির অন্তর্ভুক্ত একজন প্রবীণ নেতাকে কেন আমন্ত্রণ জানানো হল না নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে?
কোনও আমন্ত্রণ পাননি দিলীপ
শনিবার সকালে দিলীপ ঘোষ নিজেই জানান, তাঁর কাছে কোনও আমন্ত্রণ এসে পৌঁছায়নি। দিলীপের কথায়, “নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে বিভিন্ন স্তরের পদাধিকারীদের ডাকা হয়েছে। আমি তো কোনও পদে নেই। তাই আমাকে না-ও ডাকা হতে পারে।” যদিও দিলীপ ঘোষ এখনও রাজ্য বিজেপি-র কোর কমিটির সদস্য, এবং রাজ্য কমিটিরও অন্তর্ভুক্ত। সেই দিক থেকে বিচার করলে তাঁর আমন্ত্রণ পাওয়ার কথা ছিল বলেই মনে করছেন দলের অনেকেই।
কী বলছে বিজেপি সূত্র?
বিজেপি রাজ্য দফতর সূত্রে খবর, মণ্ডল সভাপতি থেকে শুরু করে রাজ্য কমিটির সাধারণ সদস্যদেরও ফোন করে সভায় উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে দিলীপ ঘোষকে বাদ দেওয়া কী ইচ্ছাকৃত? দলের অন্দরে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
একইসঙ্গে দলের আর এক প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায়ও এই সভায় আমন্ত্রণ পাননি। তবে তাঁর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ৭৫ বছর বয়স হওয়ার পরে দলের নিয়ম অনুযায়ী সক্রিয় রাজনীতিতে থাকা যায় না। তাই তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কিন্তু দিলীপ ঘোষের ক্ষেত্রে বয়স কোনও বাধা নয়। বরং তাঁর রাজনৈতিক সক্রিয়তা এখনও যথেষ্টই তীব্র।
দিলীপের ‘দোষ’ কী?
বিজেপি সূত্রের একাংশের দাবি, দিলীপ ঘোষের দিঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনে উপস্থিতি, এবং সেই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করাই তাঁর বিরুদ্ধে দলের অন্দরে ক্ষোভের মূল কারণ। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে দিলীপ ঘোষ মমতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন। এমনকি সাম্প্রদায়িক হিংসার অভিযোগ থেকেও তাঁকে রেহাই দেন।
এই বক্তব্যগুলি আরএসএসের দক্ষিণবঙ্গ দফতর ‘কেশব ভবন’-এর কাছেও ভালোভাবে গৃহীত হয়নি বলেই সূত্রের খবর। সঙ্ঘের তরফ থেকেও এই বিষয়ে ‘উপযুক্ত মহলে পরামর্শ’ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন দলের কিছু অভ্যন্তরীণ মহল। যদিও কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি।
দলের তরফে ‘নীরব অবরোধ’?
সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্য বিজেপির বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও দেখা যায়নি দিলীপ ঘোষকে। আলিপুরদুয়ার ও কলকাতার সভায় অনুপস্থিত থাকাও সেই ধারারই অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। দলের একাংশের যুক্তি, দিলীপকে এই ধরনের বড় সভা থেকে দূরে রাখার পিছনে রয়েছে তাঁর ‘সম্মান’-রক্ষার কৌশল। কারণ, কোনও কর্মসূচিতে দিলীপ উপস্থিত থাকলে স্থানীয় স্তরের কেউ প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিতে পারেন, যা দলীয় শৃঙ্খলার পক্ষে অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে।
এর আগে কোলাঘাটে দিলীপ ঘোষ চা-চক্রে যোগ দিতে গেলে কিছু কর্মীর প্রকাশ্য বিক্ষোভের মুখে পড়েন। সেই ঘটনার পরেই দিলীপের বক্তব্যের সুর আরও চড়েছে। ফলে তাঁকে নিয়ে মাঠে-ময়দানে দলের তৃণমূল স্তরের কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ যে বাড়ছে, তা অস্বীকার করছেন না বিজেপির অনেকেই।
রাজ্য নেতৃত্ব কী বলছেন?
বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ রাজ্য বিজেপির বর্তমান নেতৃত্ব। তবে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, “দিলীপদা আমাদের দলের নেতা। কিন্তু তিনি শেষ যে পদে ছিলেন, সেটা সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির। সুতরাং তাঁর বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে সর্বভারতীয় স্তরেই।”
প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে দলে এমন এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা ক্রমশ প্রান্তিক হয়ে পড়ছেন? এটা কি দিলীপ ঘোষের ‘স্বাধীন বক্তব্য’-র মূল্য, না কি দলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরই বহিঃপ্রকাশ? রাজ্য বিজেপি-র ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে দিলীপ ঘোষের অবস্থান কোনদিকে মোড় নেয়, এখন সেটাই দেখার।
West Bengal: Former Bengal BJP chief Dilip Ghosh was notably absent from Amit Shah’s Kolkata event, raising questions within the party after he also missed PM Modi’s Alipurduar program. Despite being a core committee member, he received no invitation, sparking internal debate.