দমদম: ফের একবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) সভা থেকে ব্রাত্য হলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। শুক্রবার দমদমে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা। কিন্তু সেখানে নাম নেই দিলীপ ঘোষের। ফলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে—তাহলে কি বিজেপির রাজ্য রাজনীতিতে দিলীপ ঘোষকে এখনও একঘরে করে রাখা হচ্ছে?
প্রধানমন্ত্রীর সভায় পরপর তিনবার ডাক পাননি দিলীপ ঘোষ। এর আগে গত ১৮ জুলাই দুর্গাপুরে অনুষ্ঠিত সভাতেও তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যদিও পরে স্থানীয় কর্মীরা তাঁকে ডাকলেও, অভিমানে শেষমেশ সেই সভায় উপস্থিত হননি প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, রাজ্য নেতৃত্বই তাঁকে যেতে নিষেধ করেছিল।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্ব তাঁর নিজের জেতা আসন থেকে তাঁকে সরিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পাঠিয়েছিল। কিন্তু সেখানে পরাজয়ের পর কার্যত সাংগঠনিক দিক থেকে পাশে আর কেউ ছিলেন না। সাংসদ পদ হারান, বিধায়ক পদও যায়, এমনকি রাজ্য সভাপতির পদও হারাতে হয়। সেই থেকেই ধীরে ধীরে রাজনীতিতে একঘরে হতে শুরু করেন দিলীপ ঘোষ।
এমনকি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও তাঁকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছিলেন দিলীপ নিজে। প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, বৈঠকে তাঁকে বসার চেয়ার পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।
তবে সম্প্রতি শমীক ভট্টাচার্য বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি হওয়ার পর থেকে দিলীপের অবস্থান কিছুটা বদলেছে বলেই মনে করছিল দলীয় মহল। তাঁকে আবার কিছু সাংগঠনিক কাজে দেখা যাচ্ছিল। জেলা পর্যায়ের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় উপস্থিত থাকছিলেন দিলীপ ঘোষ। কিন্তু দমদমে মোদির সভায় আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ না পাওয়া নিয়ে নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে।
দলীয় কর্মীদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন—তাহলে কি নব্য বিজেপি নেতৃত্বের চাপেই দিলীপ ঘোষকে এখনও পুরোপুরি জায়গা দেওয়া হচ্ছে না? শমীক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে কি দল আবার পুরোনো ক্ষোভ মেটাতে পারছে না?
যদিও দিলীপ ঘোষ এবার আর প্রকাশ্যে অভিমান দেখাতে চান না। তিনি জানিয়েছেন, দলকে অস্বস্তিতে ফেলতে চান না। তাই ওইদিন তিনি অন্য একটি জেলায় সাংগঠনিক কাজে থাকবেন। ফলে মোদির সভা থেকে দূরে থাকলেও তিনি প্রকাশ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া দেবেন না বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে বিজেপির জেলা কমিটি ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজ্য কমিটি ঘোষিত হবে। সেখানেই নজর থাকবে—প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ঠাঁই হয় কি না। যদি রাজ্য কমিটিতে তিনি জায়গা পান, তাহলে অনেকটাই স্পষ্ট হবে যে, তাঁর গুরুত্ব ফের ফিরে আসছে। আর যদি নাম না থাকে, তবে পরিষ্কার হবে—দল এখনও তাঁকে রাজনৈতিক মঞ্চে ব্রাত্য করেই রাখতে চাইছে।
বাংলা বিজেপির রাজনীতিতে দিলীপ ঘোষ সবসময়ই বিতর্কিত অথচ জনসংযোগে দক্ষ এক নেতা হিসেবে পরিচিত। এক সময় তাঁর সভায় ভিড় হতো চোখে পড়ার মতো। কিন্তু লোকসভা ভোটে পরাজয়ের পর থেকে রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকা ক্রমশই ক্ষীণ হয়ে আসছে। এখন মোদির সভায় ডাক না পাওয়া নতুন করে প্রমাণ করছে—বিজেপির ভেতরে এখনও তাঁকে ঘিরে টানাপোড়েন অব্যাহত। আগামী দিনে রাজ্য কমিটি এবং পরবর্তী সাংগঠনিক দায়িত্বেই বোঝা যাবে—দিলীপ ঘোষকে দল কতটা গুরুত্ব দিতে চাইছে।