দিঘা: ২৭ জুন দিঘায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে মহা জগন্নাথ রথযাত্রা (Jagannath Rath Yatra)। দিঘা থেকে রথে চড়ে জগন্নাথদেব ভাই বলরাম ও বোন সুভদ্রাকে সঙ্গে নিয়ে রওনা দেবেন মাসির বাড়ির উদ্দেশে। আর সেই উপলক্ষে তুঙ্গে প্রস্তুতি দিঘার পদিমা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত খাদাল গোবরা এলাকার ‘মাসির বাড়ি মন্দিরে’।
প্রতিবছর এই রথযাত্রা উপলক্ষে মাসির বাড়ি মন্দিরে চলে বিপুল উৎসব আয়োজন। জগন্নাথদেবের রথে চড়ে আগমনকে কেন্দ্র করে এই বছর দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে একাধিক বিশেষ ব্যবস্থা ও আয়োজন।
কী কী আয়োজন থাকছে দর্শনার্থীদের জন্য?
বিশেষ ভোগ ও প্রসাদ বিতরণ: মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রথযাত্রার দিন সকাল থেকেই শুরু হবে নানা ধরনের ভোগ রন্ধন ও প্রসাদ বিতরণ। ভক্তদের জন্য নির্দিষ্ট লাইনে দাঁড়িয়ে প্রসাদ নেওয়ার সুযোগ থাকবে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লোকসঙ্গীত: স্থানীয় শিল্পীরা পরিবেশন করবেন বাউল গান, লোকনৃত্য ও ধর্মীয় সঙ্গীত। সন্ধ্যা বেলায় আয়োজন করা হয়েছে একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে তুলে ধরা হবে জগন্নাথ দর্শনের আধ্যাত্মিক দিক।
স্বাস্থ্য ও মেডিকেল ক্যাম্প: দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষার জন্য মাসির বাড়ি মন্দির চত্বরে ফ্রি মেডিকেল চেক-আপ ক্যাম্প ও প্রাথমিক চিকিৎসা শিবির থাকবে। থাকবে অ্যাম্বুল্যান্স ও পর্যাপ্ত ওষুধ।
জল ও শীতল পানীয়ের ব্যবস্থা: গ্রীষ্মকালীন তাপদাহ মাথায় রেখে পন্ডাল চত্বরে পর্যাপ্ত ফ্রিজার ও বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
যানচলাচল ও পার্কিং ব্যবস্থাপনা: রথযাত্রা উপলক্ষে বিশেষ ট্রাফিক প্ল্যান তৈরি করেছে দিঘা থানা ও স্থানীয় প্রশাসন। খাদাল গোবরা এলাকায় অস্থায়ী পার্কিং জোন তৈরি হয়েছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের মোতায়েন করা হয়েছে।
আলোকসজ্জা ও সজ্জিত রথপথ: মাসির বাড়ি মন্দির এলাকা ও রথযাত্রার রুট জুড়ে থাকছে ঝকঝকে আলোকসজ্জা, ধর্মীয় পতাকা ও ফুলের মালায় সজ্জিত পথ।
রথযাত্রাকে ঘিরে মন্দির কর্তৃপক্ষ, গ্রাম পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক চলছে। উদ্দেশ্য একটাই— জগন্নাথদেব ও দর্শনার্থীদের আতিথেয়তায় যেন কোনও খামতি না থাকে।
প্রশাসনের তরফেও জোর প্রস্তুতি চলছে। দিঘা থানার পুলিশ প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, “এই সময় পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ব্যাপক ভিড় হয়। নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন, CCTV ক্যামেরা, মেডিকেল টিম ও প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ক্যাম্প স্থাপন—সব কিছুই করা হবে।”
এই বছর বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, বাউল গান ও স্থানীয় লোকনৃত্য, যা রথযাত্রাকে আরও জমজমাট করে তুলবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা।
মাসির বাড়ি মন্দির কমিটির এক সদস্য জানান, “জগন্নাথের সেবা আমাদের গর্ব। আমরা চাই, যাঁরা আসবেন তাঁরা যেন ঈশ্বর দর্শনের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অংশ নিতে পারেন। তাই সার্বিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে আলোকসজ্জা, সব কিছুর উপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।”
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রথযাত্রার দিন নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবহন—সবকিছুর জন্য পৃথক টিম তৈরি হয়েছে। পর্যাপ্ত পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হবে যাতে ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
এই রথযাত্রা শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি দিঘার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ দিঘা ও তার আশপাশের গ্রামাঞ্চল থেকে এখানে ছুটে আসেন।
এবারের আয়োজনে যেমন ধর্মীয় ভক্তি থাকবে, তেমনি থাকবে মানবিক ও সামাজিক দায়িত্ববোধের ছোঁয়া।