আগস্টের মাঝামাঝি এসে দিঘা যেন পর্যটকের ঢল সামলাতে প্রস্তুত হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যেই সমুদ্রতটবর্তী এই জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রের ৯০ শতাংশ হোটেলের রুম বুকিং হয়ে গিয়েছে। হোটেল মালিকদের দাবি, হাতে গোনা কয়েকটি রুম এখনো খালি আছে, কিন্তু সেগুলিও অচিরেই ভরে যাবে বলে তাঁদের ধারণা।
ছুটির সম্ভাবনা বাড়িয়েছে ভিড়
এই বছর ১৫ আগস্ট, স্বাধীনতা দিবস পড়েছে শুক্রবার। এর ঠিক পরেই রয়েছে শনি ও রবিবার— অর্থাৎ একটানা তিন দিনের ছুটি। দীর্ঘ উইকএন্ডে পরিবার, বন্ধু বা দম্পতিদের জন্য ছুটি কাটানোর অন্যতম পছন্দের গন্তব্য হিসেবে দিঘা বরাবরই তালিকার শীর্ষে থাকে। কলকাতা ও সংলগ্ন জেলা ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবং ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও বিহার থেকেও প্রচুর পর্যটক এই সময়ে দিঘায় ভিড় জমান।
হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, “এখন বুকিংয়ের এমন অবস্থা যে, দিঘায় এসে যদি আগে থেকে রুম রিজার্ভ না করে থাকেন, তাহলে থাকার জায়গা পাওয়া সত্যিই মুশকিল হবে।” বিশেষ করে সমুদ্রতট সংলগ্ন বিলাসবহুল হোটেলগুলির বুকিং তো অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। মাঝারি ও বাজেট হোটেলগুলিতেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।
প্রশাসনের কড়া নজরদারি
বর্ধিত পর্যটক চাপ সামলাতে দিঘার প্রশাসনও নেমে পড়েছে প্রস্তুতি নিতে। ইতিমধ্যেই শহরের প্রবেশদ্বারে শুরু হয়েছে নাকা চেকিং। দূরপাল্লার গাড়ি থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত গাড়ি— প্রতিটি যানবাহনের কাগজপত্র, ড্রাইভারের লাইসেন্স এবং প্রয়োজনীয় নথি পরীক্ষা করা হচ্ছে। উৎসব ও ছুটির মরসুমে নিরাপত্তাজনিত কোনও ফাঁক রাখতে নারাজ পুলিশ প্রশাসন।
দিঘার বিভিন্ন রাস্তায় ও সমুদ্রসৈকতের আশপাশে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশকর্মী। নজরদারি বাড়াতে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরাও। স্থানীয় থানার তরফে জানানো হয়েছে, ভিড়ের সময় ছোটখাটো অসুবিধা বা অপরাধমূলক ঘটনা এড়াতে কড়া নজরদারি চালানো হবে।
পর্যটকদের জন্য বিশেষ নির্দেশিকা
নিরাপত্তা বজায় রাখতে দিঘা প্রশাসনের তরফে পর্যটকদের জন্য কিছু নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সমুদ্রস্নানের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সীমার বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ। লাইফগার্ডদের নির্দেশ মানা বাধ্যতামূলক। এছাড়া, সন্ধ্যার পর সমুদ্রতটে কোনও রকম আতশবাজি বা উচ্চ শব্দে গান বাজানোও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আবর্জনা ফেলা ও প্লাস্টিক ব্যবহারে কড়া নজর থাকবে বলে জানিয়েছে পৌরসভা।
ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি
এত সংখ্যক পর্যটক আসায় শুধু হোটেল নয়, স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হচ্ছেন। সমুদ্রসৈকতের কাঁকড়া-চিংড়ি বিক্রেতা, হস্তশিল্প ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁ মালিক— সকলেরই ব্যবসা বাড়বে বলে আশা। এক দোকানদার বললেন, “এমন ছুটি আমাদের জন্য উৎসবের মতো। প্রতিটি দোকানে ভিড় হয়, বিক্রি দ্বিগুণেরও বেশি হয়।”
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায়ও জোর
প্রচুর পর্যটকের আগমনে ট্রাফিক জ্যামের আশঙ্কা থাকায় দিঘার প্রধান সড়কগুলিতে বিশেষ ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। হোটেল মালিকদেরও অনুরোধ করা হয়েছে, পর্যটকদের গাড়ি যেন রাস্তার ধারে বেপরোয়া ভাবে না রাখা হয়।
দিঘার আবহে উৎসবের আমেজ
সৈকত শহর দিঘা এখন আলোকসজ্জা ও ব্যস্ততার আবহে ভরে উঠেছে। সৈকতের ধারে বসানো হয়েছে বাড়তি বেঞ্চ, সাজানো হচ্ছে নতুন ফুড স্টল। স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলিও পর্যটকদের বিনোদনের জন্য ছোটখাটো অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা করছে।
সব মিলিয়ে, স্বাধীনতা দিবসের দীর্ঘ উইকএন্ডকে ঘিরে দিঘা এখন প্রস্তুত পর্যটকের ঢল সামলাতে। প্রশাসন, হোটেল ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা সবাই মনে করছেন, এই কয়েক দিনে দিঘা শুধু ভিড়েই জমে উঠবে না, অর্থনৈতিক দিক থেকেও বিশেষ লাভবান হবে।