দিঘার (Digha) জনপ্রিয় ‘ঢেউ সাগর’ অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ভেঙে ফেলতে হবে। ভারতের জাতীয় পরিবেশ আদালত (এনজিটি)-এর পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চ সম্প্রতি এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আদালত জানিয়েছে, এই পার্কটি তৈরি করতে গিয়ে উপকূলীয় নিয়ন্ত্রণ এলাকা (CRZ) আইন ভঙ্গ হয়েছে। এর ফলে, মন্দারমণির শতাধিক হোটেল ভাঙার পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প ‘ঢেউ সাগর’-ও ভেঙে ফেলতে হবে।
এনজিটি আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছে, এই থিম পার্ক নির্মাণে সিআরজেড আইন লঙ্ঘিত হয়েছে। ২০১৯ সালে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে, ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’-এর জন্য ‘ঢেউ সাগর’ প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তখন থেকেই এটি দিঘার যাত্রানালা এলাকাতে তৈরি করা হয়েছিল। তবে এই পার্ক নির্মাণের জন্য সঠিক পরিবেশগত অনুমতি নেয়া হয়নি, যা পরবর্তীতে পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্তের মাধ্যমে এনজিটিতে মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
২০২০ সালে, করোনার কারণে বিধি শিথিল হওয়ার পর এই প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। দিঘা-শঙ্করপুর (Digha) উন্নয়ন পর্ষদের (ডিএসডিএ) তত্ত্বাবধানে এটি বাস্তবায়িত হয়েছিল। ‘ঢেউ সাগর’ থিম পার্কে বিভিন্ন রাইড এবং সুবিধা রয়েছে, যা পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় স্থান হয়ে উঠেছিল। পার্কের মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হয়, যা আরও বেশি পর্যটককে আকর্ষণ করে।
তবে, আদালতের নির্দেশ অনুসারে, তিন মাসের মধ্যে ‘ঢেউ সাগর’ থিম পার্ককে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এই নির্দেশে পরিবেশগত নিয়ম ভঙ্গের ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের তিনটি নির্দেশনার উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিষয়টি রাজ্য সরকারও মেনে নেয়নি এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছে উচ্চ আদালতে আপিল করার। যদিও এই নির্দেশ এখনই কার্যকর হবে না, তবে এই রায়ের ফলে রাজ্য সরকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে।
এই থিম পার্কটির নির্মাণে বিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে আগে থেকেই বিরোধী পক্ষ এবং পরিবেশকর্মীরা সরব ছিলেন। তাদের দাবি ছিল, সমুদ্র তীরে এ ধরনের বেসরকারি নির্মাণ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এনজিটি এই ধরনের প্রকল্পের অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।
দিঘার (Digha) সমুদ্র তীরে ‘ঢেউ সাগর’ একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এর নির্মাণ পরিবেশ এবং সিআরজেড আইন অনুযায়ী বৈধ হয়নি। এনজিটি বিচারপতি বি অমিত স্থালেকর এবং বিশেষজ্ঞ সদস্য অরুণকুমার ভার্মা একমত হয়েছেন যে, এই প্রকল্পটি আইন ভঙ্গ করেছে এবং তা ভাঙতে হবে।
এনজিটি-র এই রায়ের ফলে ‘ঢেউ সাগর’ পার্কের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। এটি পর্যটন শিল্পে বড় ধাক্কা হতে পারে কারণ পর্যটকের আকর্ষণ ছিল এই পার্কের রাইড এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তবে, রাজ্য সরকারের আপিলের পরবর্তী রায় কী হবে, তা জানার জন্য সবাই আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করছে।