নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুর: শরীরের সীমাবদ্ধতা তাকে থামাতে পারেনি, কিন্তু আজও সমাজ ও প্রশাসনিক কাঠামোর দেওয়ালে আটকে রয়েছে কেশপুরের তাতারপুর গ্রামের মেধাবী কন্যা স্বর্ণাভা বেরা-র ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন। ২০২৫ সালের NEET (National Eligibility cum Entrance Test)-এ প্রতিবন্ধী (PWBD) কোটায় ৮০৭ র্যাঙ্ক পেয়েও, শুধুমাত্র শারীরিক অক্ষমতার কারণ দেখিয়ে তাকে MBBS-এ ভর্তি হতে দেওয়া হয়নি।
স্বর্ণাভার শারীরিক অক্ষমতা – অর্থাৎ সে পায়ে হাঁটতে অক্ষম, হুইলচেয়ারে চলাফেরা করে – একমাত্র কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে কেন সে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করতে উপযুক্ত নয়। ভর্তির সময় বলা হয়, এমন অবস্থায় সে ভবিষ্যতে হাসপাতালের চাপে রোগীদের পরিষেবা দিতে পারবে না। অথচ সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, যদি কারও শারীরিক অক্ষমতা ৪০ শতাংশের বেশি হলেও, মানসিকভাবে যদি সে সুস্থ ও প্রস্তুত থাকে, তবে তার চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়াশোনার অধিকার আছে।
স্বর্ণাভা ২০২৩ সালে মাধ্যমিক এবং ২০২৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে সাহষপুর ঘোষাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম হয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। কেশপুর ব্লক এবং জেলায় PWBD বিভাগে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে। শুধু পড়াশোনায় নয়, সে একজন দক্ষ চিত্রশিল্পীও। বহু পুরস্কার পেয়েছে তার আঁকা ছবির জন্য।
স্বর্ণাভার কথায়, “আমি ছোট থেকে স্বপ্ন দেখতাম ডাক্তার হবো। সেইমতোই উচ্চ মাধ্যমিকের আগেই NEET-এর প্রস্তুতি শুরু করি। ভালো র্যাঙ্কও করেছি, কিন্তু শারীরিক অক্ষমতা দেখিয়ে যখন ভর্তি আটকে দেয়, ভেঙে পড়ি।” তবে হাল ছাড়েনি সে। জানিয়েছে, প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হবে।
এই ঘটনা জানার পর জেলা শাসক এবং রাজ্যের মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভূঁইয়া তাকে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। উল্লেখ্য, একসময় মানস ভূঁইয়া স্বর্ণাভার পড়াশোনার দায়িত্বও নিয়েছিলেন। এখন তিনি বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তুলে ধরবেন বলেও আশা করছেন পরিবার।
স্বর্ণাভার বাবা সর্বরঞ্জন বেরা বলেন, “পিজিতে যখন ভেরিফিকেশনে জানানো হলো যে ও ভর্তি হতে পারবে না, ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম। অথচ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে মানসিকভাবে সক্ষম হলে চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়া যায়। আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি, যাতে তিনি স্বর্ণাভার পাশে দাঁড়ান।”
স্থানীয় পাড়া-প্রতিবেশীরাও ব্যথিত। তারা জানিয়েছেন, “স্বর্ণাভা ছোট থেকেই খুব মেধাবী। যদি সে ডাক্তার হতে পারে, আমাদের গ্রামের জন্য সেটা গর্বের বিষয় হবে।”
এখন সকলের নজর প্রশাসনের দিকে। কোর্টের রায়, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ – এসবের ভিত্তিতে কেশপুরের স্বর্ণাভার ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন পূরণ হয় কি না, সেটাই দেখার বিষয়। তবে যে লড়াই শুরু করেছে স্বর্ণাভা, তা নিঃসন্দেহে হাজার হাজার প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীর জন্য অনুপ্রেরণা।