নদিয়ার কৃষ্ণনগরে (Krishnanagar Murder Case) চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নতুন মোড়। মানিকপাড়ার বাসিন্দা ঈশিতা মল্লিককে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত দেশরাজ সিংয়ের বিএসএফ জওয়ান বাবা রগুবিন্দর প্রতাপ সিংকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় পুলিশের তদন্তে নতুন তথ্য সামনে এসেছে, যা রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
দেশরাজের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ ওঠার পর থেকে তাঁর পরিবারের সদস্যদের গতিবিধি নিয়ে পুলিশ তদন্ত জোরদার করেছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রগুবিন্দরকে গ্রেফতার করা হয়।ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, গত সোমবার কৃষ্ণনগরের মানিকপাড়া এলাকায় ঈশিতা মল্লিকের বাড়িতে ঢুকে দেশরাজ তাঁকে গুলি করে হত্যা করে বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দেশরাজ ঘটনার আগের দিন তাঁর বাবা রগুবিন্দরকে ফোনে জানিয়েছিলেন যে তিনি উত্তরপ্রদেশের গোরখপুরে নিজের বাড়িতে ফিরছেন। রগুবিন্দর প্রতাপ সিং, যিনি বর্তমানে রাজস্থানে বিএসএফ-এর কাজে নিযুক্ত, তিনি ছেলের জন্য পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসের টিকিটও কেটে দিয়েছিলেন। তবে, দেশরাজ ট্রেনে না উঠে কৃষ্ণনগরে থেকে যান এবং পরের দিন এই হত্যাকাণ্ড ঘটান।
পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, রগুবিন্দর প্রতাপ সিং ২০১৫ সালে হরিণঘাটায় এনডিআরএফ-এর ডেপুটেশনে এসেছিলেন। সেই সময় তিনি বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের জেঠিয়া থানার অন্তর্গত ধরমপুর কলোনিতে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তাঁর স্ত্রী পুনমদেবী এবং ছেলে দেশরাজ ও মেয়েকে কাঁচড়াপাড়া কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়েছিল।
তবে, দেশরাজের আচরণ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে অভিযোগ ছিল। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, দেশরাজ প্রায়ই মা ও বোনের সঙ্গে ঝগড়া করতেন এবং তাঁর রগচটা স্বভাবের জন্য এলাকায় পরিচিত ছিলেন।রগুবিন্দর প্রতাপ সিং ফোনে পুলিশকে জানিয়েছেন, “আমার ছেলে যদি দোষী হয়, তবে তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।” তবে, তদন্তে তাঁর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রগুবিন্দর ছেলের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর ফোন রেকর্ড এবং দেশরাজের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। এছাড়া, হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রের উৎস নিয়েও পুলিশ তদন্ত করছে, কারণ রগুবিন্দরের বিএসএফ জওয়ান হিসেবে অস্ত্রের অ্যাক্সেস থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
ঈশিতা মল্লিকের পরিবার এই ঘটনায় গভীর শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাঁরা দাবি করেছেন, দেশরাজের সঙ্গে ঈশিতার কোনও পূর্বশত্রুতা ছিল না, এবং এই হত্যা পরিকল্পিত। পরিবারের সদস্যরা বলেন, “ঈশিতা একজন নিরীহ মেয়ে ছিল। তার সঙ্গে এমন নৃশংস ঘটনা কেন ঘটল, আমরা বুঝতে পারছি না। আমরা কঠোর বিচার চাই।”
কংগ্রেস কার্যালয় ভাংচুরের অভিযোগে গ্রেফতার রাকেশ সিংএর ছেলে
স্থানীয়রা এই ঘটনায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে এবং দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে।বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেন, “কৃষ্ণনগরে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটছে, অথচ পুলিশ সময়মতো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ। এই সরকারের অধীনে নারী নিরাপত্তা বলে কিছু নেই।”