ডেরেকের ফোন গেল সুখেন্দুর কাছে, অনুঘটক কুণাল

বাংলার রাজনীতিতে একাধিক বার আলোচনায় এসেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় (Shekhar Ray)। তবে সম্প্রতি তিনি একটি বিতর্কিত ঘটনায় নিজেকে বেশ কিছু দিন আলোচনার…

Kunal's warning opposition reaction

বাংলার রাজনীতিতে একাধিক বার আলোচনায় এসেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় (Shekhar Ray)। তবে সম্প্রতি তিনি একটি বিতর্কিত ঘটনায় নিজেকে বেশ কিছু দিন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছিলেন। তাঁর আরজি কর-কাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিতর্কিত মন্তব্যগুলির কারণে দলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের মধ্যে কিছুটা তিক্ততা দেখা দেয়। তবে, এই সবকিছুর পরও শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব ঘুচে গেছে। এক নতুন দিশায় এগিয়ে চলেছে তাঁর রাজনৈতিক জীবন।

এই ঘটনা শুরু হয়েছিল কিছুদিন আগে, যখন সুখেন্দুশেখর রায় আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন। একের পর এক বিতর্কিত পোস্ট করেছিলেন তিনি, যার মধ্যে ছিল দলের প্রতি তীব্র সমালোচনা। এমনকি, সে সময় লালবাজারে তাঁকে তলব করা হয়। এসব নিয়ে তৃণমূল শিবিরে শুরু হয় আলোচনা, এবং সুখেন্দুর সম্পর্কে দলের নেতা-কর্মীরা সন্দেহ প্রকাশ করতে শুরু করেন। এমনকি মনে করা হচ্ছিল, তিনি দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন।

   

কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সুখেন্দুর সম্পর্ক তৃণমূলের সঙ্গে পুনরুদ্ধারের জন্য যিনি এগিয়ে এসেছিলেন, তিনি হলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। কুণাল দলের মধ্যে অবস্থা সমঝোতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন। সূত্রের খবর, কুণাল ঘোষ পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, যাতে তিনি সুখেন্দুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাঁর ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে দেন।

কুণালের পরামর্শ অনুযায়ী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুখেন্দুর কাছে একটি চিঠি পাঠান। এই চিঠির মাধ্যমে তিনি সুখেন্দুকে জানান, আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে তাঁর ব্যথিত অবস্থার কথা এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কথা। মমতা লেখেন, “মেয়ের বাবা হিসেবে আমি এই ঘটনার জন্য ব্যথিত ছিলাম এবং আমি বিভিন্ন খবরে বিভ্রান্ত হয়েছিলাম।” সুখেন্দুর সঙ্গে মমতার এই কথোপকথন এবং তাঁর ভুল বুঝে নেওয়ার বিষয়টি সম্পর্কের বরফ গলানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।

এদিন, ১১ ডিসেম্বর, সুখেন্দুশেখর রায় তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদদের বৈঠকে উপস্থিত হন। তাঁর উপস্থিতি নিয়ে দলের মধ্যে একটি আশার সঞ্চার হয়। জানা যাচ্ছে, ডেরেক ও’ব্রায়েন (Derek O’Brien) রাতের মধ্যেই সুখেন্দুকে এই বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। এই বৈঠকে তাঁর উপস্থিতি, দলীয় নেতাদের মধ্যে একটি ইতিবাচক বার্তা প্রেরণ করে, এবং তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হয়।

এখন থেকে সুখেন্দু শেখর রায় তৃণমূলের সব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন, এমনটাই জানানো হয়েছে দলীয় সূত্রে। এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়, কারণ এর মাধ্যমে তিনি আবার দলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হচ্ছেন। আগের বিতর্কিত অবস্থান থেকে সরে এসে, এখন তিনি তৃণমূলের হয়ে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে কাজ করবেন।

এমনকি, সুখেন্দু শেখর রায় আজ ধনকরের বিরুদ্ধে তৃণমূলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। তার এহেন সিদ্ধান্ত দলের প্রতি তাঁর একনিষ্ঠতা এবং সমর্থনের প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর ফলে দলের মধ্যে সুখেন্দুর অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে, এবং দলীয় কর্মসূচিতে তাঁর অংশগ্রহণ দলের জন্য একটি ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।

এখন প্রশ্ন ওঠে, কীভাবে তৃণমূলের এই রাজনৈতিক পালাবদল সুখেন্দু শেখর রায়ের ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করবে। এ মুহূর্তে দলীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের পর, সুখেন্দু সম্ভবত আরো দৃঢ় পদক্ষেপ নেবেন দলের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য। তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর পুনর্মিলন, রাজ্যের রাজনৈতিক পরিসরে নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।

সুখেন্দুর এই রাজনৈতিক যাত্রার দিকে তাকালে, স্পষ্ট হয় যে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় নেতৃত্ব কখনোই ব্যক্তিগত সমস্যা বা ভুল বোঝাবুঝির জন্য তাদের সদস্যদের ছেড়ে দেয়নি। বরং, দলের মধ্যে সমঝোতা এবং সম্পর্কের পুনর্নির্মাণের জন্য সবসময় উদ্যোগী হয়েছে। সুখেন্দুর ক্ষেত্রে তারই উদাহরণ দেখা গেল, যখন দলের নেতারা তাঁদের অভ্যন্তরীণ সম্পর্কগুলি সুষ্ঠু করার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন।

এটি শুধু সুখেন্দু শেখর রায়ের জন্যই নয়, তৃণমূল কংগ্রেসের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। দলের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং একতা বজায় রেখে, আগামী দিনে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে এই দল।