মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে বাধা, আশ্রমে দেহ ব্যবসার অভিযোগ

শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্রনগরে “রামকৃষ্ণ আশ্রম ঠাকুরবাড়ি” নামের একটি আশ্রমকে (Ashram) ঘিরে তীব্র বিতর্ক এবং জনরোষের সৃষ্টি হয়েছে। একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বলে…

মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে বাধা, আশ্রমে দেহ ব্যবসার অভিযোগ

শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্রনগরে “রামকৃষ্ণ আশ্রম ঠাকুরবাড়ি” নামের একটি আশ্রমকে (Ashram) ঘিরে তীব্র বিতর্ক এবং জনরোষের সৃষ্টি হয়েছে। একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বলে দাবি করলেও, এলাকাবাসী ও এক ভুক্তভোগী মহিলার অভিযোগ—এই আশ্রম কার্যত একটি অসামাজিক কর্মকাণ্ডের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত হয়, যখন এক মা বহু বছর পর তাঁর মেয়েকে দেখতে আশ্রমে আসেন, যাকে তিনি ছোটবেলায় এই আশ্রমেই রেখে গিয়েছিলেন। সেই মেয়েটি বর্তমানে আশ্রমের আবাসিক। কিন্তু মায়ের দাবি, বহুবার চেষ্টা করেও তিনি মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। এমনকি আশ্রমের ভেতর থেকেই মেয়ে জানিয়ে দেয়, তিনি মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চান না। মায়ের অভিযোগ, “ওকে ওষুধ খাইয়ে বশ করে রেখেছে। ওর সঙ্গে কিছু একটা ভুল হচ্ছে। না হলে মা’কে এমন অবজ্ঞা করে?”

   

সেইসঙ্গে আশ্রমের গঠন, পরিচালনা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও উঠছে একাধিক প্রশ্ন। এলাকাবাসীর দাবি, আশ্রমটি তিনদিক থেকে একেবারে ঘেরা, কোনও খোলা জানালা বা ফাঁকফোকর নেই। বাইরে থেকে দেখা তো দূর, পরিচিত কেউ ছাড়া ভিতরে প্রবেশ করাই অসম্ভব। রাতে দামি গাড়ি আশ্রমে ঢুকতে দেখা যায়, যা ভোরের আলো ফোটার আগেই বেরিয়ে যায়—এমনটাই দাবি করেছেন অনেকেই।

তাদের আরও অভিযোগ, আশ্রমের বিরুদ্ধে কথা বললেই মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় এবং পুলিশি ভয় দেখানো হয়। এলাকার মানুষ একাধিকবার মাস পিটিশনের মাধ্যমে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলেও কার্যত কোনো সুরাহা হয়নি।

এই দিনের ঘটনায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মা। সকাল থেকে রাত অবধি গেটের বাইরে অপেক্ষা করেও দেখা না হওয়ায় তিনি আশ্রমের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। আশ্রমের মহারাজ নামে পরিচিত জয়ানন্দ নামে এক ব্যক্তি সম্পর্কে তিনি অভিযোগ করেন, “এই লোক ওকে কুপ্রভাবিত করছে। আমার মেয়েকে মানসিকভাবে বন্দি করে রেখেছে। এটা আর আশ্রম নয়, এটা একটা কারাগার।”

Advertisements

এই অভিযোগ ও উত্তেজনার জেরে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় স্থানীয় থানা ও পৌরসভার প্রতিনিধিরা। আশ্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহারাজ যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “মেয়ে নিজের ইচ্ছেতেই দেখা করতে চায় না। কাউকে জোর করা যায় না।”

তবে, আশ্রম ঘিরে এমন অস্বচ্ছতা ও জনসাধারণের মধ্যে বাড়তে থাকা ক্ষোভ প্রশাসনের কাছে বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশ্রমের ভেতরের কার্যকলাপ তদন্তের দাবি তুলেছেন অনেকেই। অনেকের মত, “যদি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হয়, তবে কেন এত গোপনীয়তা? কেন মাকে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয় না?”

একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আড়ালে কি চলছে অন্য কিছু? মানুষের বিশ্বাসের আশ্রম কি পরিণত হয়েছে গোপন অপকর্মের গড়ে? এই প্রশ্নের উত্তর এখন প্রশাসনের হাতে। ঘনঘটায় মোড় নেওয়া এই ঘটনায় এখন সকলে তাকিয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপের দিকে।