পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলার (maheshtala) রবীন্দ্রনগরে আজ একটি শিব মন্দির ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ, পাথর ছোঁড়া, দোকান ও গাড়ি ধ্বংস, বাড়ি লুটপাট এবং পুলিশের উপর হামলার মতো ঘটনা ঘটেছে।
এই পরিস্থিতির জন্য রবীন্দ্রনগর থানার ইন্সপেক্টর-ইন-চার্জ (আইসি) মুকুল মিয়ার (maheshtala)বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দাবি করছে, মুকুল মিয়ার ইচ্ছাকৃত ‘অবহেলা’ এবং তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এই ঘটনাকে উসকে দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, মাননীয় রাজ্যপাল ড. সিভি আনন্দ বোসের কাছে মুকুল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে তদন্তের আবেদন জানানো হয়েছে।
ঘটনার পটভূমি (maheshtala)
বুধবার দুপুরে মহেশতলার (maheshtala) ওয়ার্ড নং ৭-এ, রবীন্দ্রনগর থানার কাছে একটি শিব মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়, যা সারাদিন ধরে চলতে থাকে। পাথর ছোঁড়া, বাড়ি লুটপাট, দোকান ও গাড়ি ধ্বংস এবং মহিলাদের উপর হামলার মতো ঘটনা ঘটেছে।
এমনকি পুলিশও এই হামলার শিকার হয়েছে। একজন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন, এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং অগ্নিমিত্রা পাল এই ঘটনার জন্য রাজ্য সরকার এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন। তারা দাবি করেছেন, এই ঘটনা থানার সামনে ঘটলেও পুলিশ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
মুকুল মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ
রবীন্দ্রনগর (maheshtala) থানার আইসি মুকুল মিয়ার বিরুদ্ধে তিনটি প্রধান অভিযোগ উঠেছে যেমন, সকালে মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা থানার কাছেই ঘটলেও মুকুল মিয়া তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ নেননি। এই অবহেলা সংঘর্ষকে আরও উত্তপ্ত করেছে। অভিযোগ রয়েছে, মুকুল মিয়া তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে সাহায্যের জন্য দেরিতে ডাক পাঠিয়েছেন।
এর ফলে পুলিশের অতিরিক্ত বাহিনী পৌঁছাতে সময় লেগেছে। তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এনে উলটে উত্তেজনা বাড়তে দিয়েছেন, যার ফলে যারা ভাংচুরের ঘটনায় জড়িত তারা পাথর, ইট ও অন্যান্য অস্ত্র সংগ্রহ করার সময় পেয়েছে।
এই অভিযোগগুলোর পাশাপাশি, মুকুল মিয়ার টিএমসি’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, তিনি টিএমসি’র অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং তাদের ব্যাজ পরে উপস্থিত থাকেন। এই সম্পর্কের কারণে তিনি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ।
I would like to urge Hon’ble Governor Dr. C.V. Ananda Bose to assess the Maheshtala – Rabindranagar situation and advise the West Bengal Government to arrest IC Rabindranagar PS; Mukul Mia (Inspector of Police) at the earliest.
His conspicuous involvement with the Jehadi Vandals… pic.twitter.com/ef5kXU2d1I
— Suvendu Adhikari (@SuvenduWB) June 11, 2025
স্থানীয়দের ক্ষোভ ও ক্ষতি
মহেশতলার (maheshtala) হিন্দু সম্প্রদায় এই ঘটনায় ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। শিব মন্দির ও তুলসী মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়েছে, স্থানীয় দোকান ও গাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে, এবং বাড়ি লুটপাটের শিকার হয়েছে। মহিলাদের উপরও হামলার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের উপর পাথর ছোঁড়া এবং গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। বিজেপি নেতা প্রিয়াঙ্গু পান্ডে এক্স-এ লিখেছেন, “জিহাদি জনতা শিব মন্দির, তুলসী মঞ্চ, হিন্দু দোকান ও বাড়ির উপর হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনা রবীন্দ্রনগর থানার সামনে ঘটেছে, তবুও পুলিশ নীরব ছিল।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনাকে ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’ বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি দাবি করেন, মালদা ও মুর্শিদাবাদের মতো এই ঘটনাও রাজ্য সরকারের ‘তুষ্টিকরণ নীতি’র ফল। তিনি বলেন, “পুলিশের সামনে এই ভাঙচুর ও হামলা ঘটেছে। আইসি মুকুল মিয়া এবং এসডিপিও কামরুজ্জামান মোল্লার তত্ত্বাবধানে এই ঘটনা ঘটেছে।” বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল এই ঘটনাকে ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লক্ষ্যবস্তু সহিংসতা’ বলে অভিহিত করেছেন।
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা দাবি করেছে, এই ঘটনা একটি দোকান স্থাপন নিয়ে স্থানীয় বিরোধের ফল। তবে, বিরোধী দলগুলো এই ব্যাখ্যাকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এটি একটি পরিকল্পিত হামলা।
রাজ্যপালের কাছে আবেদন
মাননীয় রাজ্যপাল ড. সিভি আনন্দ বোসের কাছে আবেদন করা হয়েছে যেন তিনি মহেশতলা-রবীন্দ্রনগরের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন এবং রাজ্য সরকারকে মুকুল মিয়াকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন(maheshtala)। রাজ্যপাল পূর্বেও রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে সংঘাতে জড়িয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি আরজি কর ঘটনার পর দুর্গাপুজোর পুরস্কার বাতিল করেছিলেন এবং অপরাজিতা বিল নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছিলেন।
স্থানীয়রা এবং বিরোধী দলগুলোর দাবি, মুকুল মিয়ার গ্রেপ্তার এবং তদন্ত এই ঘটনার পেছনের সত্য উদঘাটন করবে। তারা বলছেন, মুকুল মিয়ার টিএমসি’র সঙ্গে সম্পর্ক এবং তার অবহেলা এই সংঘর্ষকে উসকে দিয়েছে। রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ এই ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
কলকাতা লিগে ইতিহাস সৃষ্টি সার্দান সমিতির, মহিলা কোচের হাতে দায়িত্ব
পুলিশের ভূমিকা ও তদন্ত
পুলিশ এই ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে, তবে মুকুল মিয়ার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। রাজ্য সরকার এই ঘটনার তদন্তের জন্য একটি উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। তবে, বিজেপি দাবি করছে, এই তদন্ত নিরপেক্ষ হবে না, কারণ রাজ্য সরকারের তুষ্টিকরণ নীতি এই ঘটনার মূল কারণ।
মহেশতলা-রবীন্দ্রনগরের ঘটনা (maheshtala)পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। মুকুল মিয়ার বিরুদ্ধে উঠেছে ইচ্ছাকৃত অবহেলা এবং রাজনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যপাল ড. সিভি আনন্দ বোসের হস্তক্ষেপ এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে।
স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতি, পুলিশের উপর হামলা এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এই ঘটনাকে গুরুতর করে তুলেছে। রাজ্য সরকারের উচিত এই ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তি না হয়।