পূর্ব মেদিনীপুরে (East Midnapore) বিজেপির গড়ে ফের বড় ধাক্কা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর গড় বলে পরিচিত এই জেলাতেই এবার বিজেপি শিবির ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন পটাশপুরের সাউৎখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্যা গীতা জানা। শুধু তিনিই নন, তাঁর সঙ্গে আরও প্রায় ৬০ জন বিজেপি কর্মীও এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলে যোগদান করেছেন। মঙ্গলবার বিকেলে পটাশপুরে অনুষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক সভায় এই যোগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
এদিনের সভায় গীতা জানার হাতে তৃণমূলের দলীয় পতাকা তুলে দেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা পটাশপুরের বিধায়ক উত্তম বারিক। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পটাশপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি স্বপন কুমার মাইতি সহ তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। বিজেপি থেকে সরে এসে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর গীতা জানা স্পষ্ট জানান, “মানুষের জন্য কাজ করতে হলে বিজেপি করে থাকা সম্ভব নয়। রাজ্যজুড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে, তাতে আমি অনুপ্রাণিত। তাই মানুষের জন্য কাজ করতে তৃণমূলে যোগ দিলাম।”
গীতা জানার এই মন্তব্যের পর উত্তম বারিক সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সারা বাংলার মানুষের কথা ভাবেন বলেই আজ রাজ্যে একের পর এক উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিজেপিতে থেকে মানুষকে কিছু দেওয়া যায় না। মানুষ সেটা বুঝতে পারছে বলেই রাজ্যজুড়ে বিজেপির নেতাকর্মীরা দলে দলে তৃণমূলে আসছেন। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি শূন্য হয়ে যাবে।”
তৃণমূল শিবিরে এই বড় যোগদানকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে। তবে বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেছে, প্রলোভন দেখিয়ে এই যোগদান করানো হয়েছে। স্থানীয় বিজেপি নেতারা বলেন, “জনগণ উন্নয়নের নামে যে প্রলোভনের রাজনীতি চলছে তার জবাব দেবে। আগামী নির্বাচনে মানুষ ভোটবাক্সে উত্তর দেবে। এই ধরনের যোগদানে বিজেপির কোনো ক্ষতি হবে না।”
উল্লেখ্য, পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপির শক্ত ঘাঁটি তৈরি হয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই জেলায় বেশ কয়েকটি আসনে বিজেপি এগিয়ে ছিল। তবে পটাশপুর বিধানসভা কেন্দ্র তৃণমূলের দখলেই রয়েছে। এদিনের এই যোগদান তৃণমূলের শক্তি আরও বাড়াল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
পটাশপুর-২ ব্লকের সাউৎখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েত বর্তমানে তৃণমূলের দখলে। তবুও গীতা জানার মতো একজন নির্বাচিত বিজেপি সদস্যার তৃণমূলে যোগদান বিজেপির জন্য বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষত শুভেন্দু অধিকারীর নিজের জেলা হওয়ায় এই ঘটনার রাজনৈতিক গুরুত্ব আরও বেশি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজ্যজুড়ে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং তৃণমূলের লাগাতার উন্নয়নমূলক প্রকল্প প্রচারের কারণে বিজেপির ঘাঁটিতেও ভাঙন শুরু হয়েছে। পটাশপুরের এই যোগদান তৃণমূলকে গ্রামীণ স্তরে আরও শক্তিশালী করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিনের অনুষ্ঠান শেষে তৃণমূল নেতৃত্ব ঘোষণা করেছে, আরও কয়েক দফায় একাধিক বিজেপি কর্মী ও সমর্থক শাসকদলে যোগ দেবেন। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ধরনের যোগদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেই তাঁদের ইঙ্গিত।