নদিয়ার কালীগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের (Debra-MLA) বিজয়ের পর বিজয় মিছিলের সময় বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয় নয় বছরের শিশুকন্যা তামান্না খাতুন। এই ঘটনায় শোকার্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবির। তিনি তামান্নার মা সাবিনা ইয়াসমিনের হাতে আর্থিক সাহায্য হিসেবে টাকা তুলে দিতে চেয়েছিলেন, দাবি করে এটি তাঁর অরাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু সাবিনা ইয়াসমিন এই টাকা প্রত্যাখ্যান করেন, ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “কীসের জন্য? আমার মুখ বন্ধ করার জন্য এই টাকা?” এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল কংগ্রেস দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে হুমায়ুন কবিরকে (Debra-MLA) শোকজ নোটিশ জারি করেছে। এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
কালীগঞ্জে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা
২৩ জুন, ২০২৫, কালীগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী আলিফা আহমেদ বড় ব্যবধানে জয়ী হন। তবে ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই বিজয় মিছিলের সময় বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তামান্না খাতুনের। স্থানীয়দের অভিযোগ, তৃণমূলের বিজয় মিছিল থেকে ছোঁড়া বোমার আঘাতেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
তামান্নার মা সাবিনা ইয়াসমিন দাবি করেন, তাঁর পরিবার সিপিএম সমর্থক হওয়ায় এই হামলার শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, “আমার মেয়ে আমার হাত ধরে দাঁড়িয়েছিল। হঠাৎ বোমার আওয়াজ, আর আমার মেয়ে হাত ছেড়ে একদিকে পড়ে যায়।” এই ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Debra-MLA) কঠোর আইনি ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন।
হুমায়ুন কবিরের ক্ষতিপূরণ প্রস্তাব (Debra-MLA)
ঘটনার পরদিন, ২৪ জুন, হুমায়ুন কবির (Debra-MLA) তামান্নার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে তামান্নার বাড়িতে যান। তিনি একটি খামে করে আর্থিক সাহায্যের প্রস্তাব দেন এবং বলেন, “এটি আমার অরাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে। আমার যাই রাজনৈতিক পরিচয় থাকুক, আমি একজন মানুষ হিসেবে এই সাহায্য দিচ্ছি।”
তবে সাবিনা ইয়াসমিন এই প্রস্তাব ক্ষোভের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, “আমার মুখ বন্ধ করার জন্য এই টাকা? আমি ইনসাফ চাই, টাকা নয়।” সাবিনার এই প্রতিক্রিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। অনেকে তাঁর সাহস ও শোকের মধ্যেও দৃঢ়তার প্রশংসা করেছেন।
তৃণমূলের শোকজ নোটিশ
হুমায়ুন কবিরের (Debra-MLA) এই পদক্ষেপ দলের ভাবমূর্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করে তৃণমূল কংগ্রেস। ২৬ জুন, তৃণমূল দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে হুমায়ুন কবিরকে শোকজ নোটিশ জারি করে। দলের মতে, তাঁর এই উদ্যোগ ছিল অপরিকল্পিত এবং সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে দলের অবস্থানকে বিব্রতকর করে তুলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টে বলা হয়, “ডেবরার বিধায়ককে শোকজ করল তৃণমূল।” এই ঘটনা দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও নেতৃত্বের সমন্বয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম তৃণমূলের বিজয় মিছিলের সময় বোমা ছোঁড়ার ঘটনাকে “নৃশংসতার নমুনা” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি একটি পোস্টে বলেন, “তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা এই ঘটনার জন্য দায়ী।”
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “নির্বাচনে জয়ের নামে বীভৎসতার জয় হয়েছে।” বিজেপি নেতা লকেট চট্টোপাধ্যায়ও হুমায়ুনের ক্ষতিপূরণ প্রস্তাবকে “টাকার রাজনীতি” বলে সমালোচনা করেছেন। তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দল এই ঘটনার তদন্ত করছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একটি পোস্টে বলা হয়, “শিরদাঁড়া সোজা রেখে তামান্নার মা চেক প্রত্যাখ্যান করেছেন। তৃণমূল ভুলে গেছে, সবাই বিক্রি নয়।” আরেকটি পোস্টে হুমায়ুনের পদক্ষেপকে “অমানবিক” বলে অভিহিত করা হয়। এই ঘটনা তৃণমূলের উপর জনরোষের ইঙ্গিত দেয়।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে প্রবাসীদের জন্য ধাপে ধাপে করণীয় বিষয়সমূহ
হুমায়ুন কবিরের ইতিহাস
হুমায়ুন কবির, (Debra-MLA) একজন প্রাক্তন আইপিএস অফিসার, তৃণমূলের ডেবরা কেন্দ্রের বিধায়ক। তিনি পূর্বেও দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য শোকজ নোটিশ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, “আমাকে তাড়ালে আমি যাচ্ছি না।” তিনি দলের শৃঙ্খলা কমিটির সম্মানে ২১ জুলাই পর্যন্ত মন্তব্য থেকে বিরত থাকার কথা জানিয়েছেন।
তামান্নার মৃত্যু এবং হুমায়ুন কবিরের (Debra-MLA) ক্ষতিপূরণ প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক তৃণমূলের জন্য একটি সংবেদনশীল চ্যালেঞ্জ। সাবিনা ইয়াসমিনের টাকা প্রত্যাখ্যান এবং তৃণমূলের শোকজ নোটিশ দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও জনসম্পর্কের দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে, এবং তৃণমূলের পরবর্তী পদক্ষেপ এই সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ হবে।