মিলন পণ্ডা, মন্দারমণি: সৈকত নগরী মন্দারমণি ফের চাঞ্চল্যর কেন্দ্রবিন্দুতে। ফিল্মি কায়দায় এক নৃত্য পরিচালককে (Dance Director) বন্দুক দেখিয়ে অপহরণ করার অভিযোগ উঠেছে। পূর্ব মেদিনীপুরের মন্দারমণির পুরুষোত্তমপুর এলাকায় বৃহস্পতিবার এই ঘটনা ঘটে। শুক্রবার সকালে মন্দারমণি উপকূল থানায় লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগ পেয়েই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, অপহৃত নৃত্য পরিচালক শ্রীকান্ত জার ওরফে প্রিন্স (বয়স ২৯), হুগলির সিঙ্গুরের বাসিন্দা। পেশাগত কারণে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কলকাতার টালিগঞ্জে থাকতেন। ২১ জুলাই কলকাতা থেকে একটি মিউজিক অ্যালবামের শুটিংয়ের জন্য ১০ সদস্যের একটি দল মন্দারমণি পৌঁছায়। তারা একটি বেসরকারি হোটেলে তিন দিনের জন্য বুকিং করে। পরের দিন আরও ৮ জন সদস্য যোগ দেন দলে। শুটিং শেষে ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই ঘটে অপহরণের ঘটনা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সদস্যদের দাবি, বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি সাদা রঙের চারচাকা গাড়ি হোটেলের সামনে এসে দাঁড়ায়। সেই গাড়ি থেকে নেমে দু’জন ব্যক্তি শ্রীকান্তকে ডাকেন। কিছুক্ষণ পর দেখা যায়, বন্দুকের ভয় দেখিয়ে জোর করে তাকে গাড়িতে তোলা হয়। স্থানীয় দোকানদার শঙ্কর মণ্ডল জানান, “আমি নিজের চোখে দেখি, বন্দুক হাতে দু’জন যুবক জোর করে ওনাকে গাড়িতে তোলে। আমাদের চোখের সামনে ঘটনাটা ঘটে যায়। তারপরে গাড়িটা কাঁথির দিকে চলে যায়।”
এই অপহরণে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে মান্দারমণি জুড়ে। প্রকাশ্য দিবালোকে এমন ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। ঘটনার পরপরই মান্দারমণি উপকূল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন শ্রীকান্তর সহকর্মীরা।
তদন্তে নেমে পুলিশ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শ্রীকান্তকে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর থেকে উদ্ধার করে। অপহরণের কাজে ব্যবহৃত গাড়িটিও আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, অপহরণকারীরা শ্রীকান্তর পূর্বপরিচিত ছিল। টাকা-পয়সা সংক্রান্ত কোনো পুরনো গণ্ডগোলের জেরেই এই অপহরণ ঘটেছে বলে পুলিশের অনুমান।
এই ঘটনায় কাঁথি মহকুমার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) শুভেন্দু কুমার জানান, “অভিযোগ পাওয়ার পর থেকেই আমরা তৎপর হই। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে। পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। যাঁরা অপহরণের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের ধরার জন্য তল্লাশি চলছে।”
এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পর্যটন নির্ভর মান্দারমণি অঞ্চলে এভাবে দিনে-দুপুরে বন্দুক ঠেকিয়ে অপহরণ হওয়া প্রশাসনিক নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সাধারণ মানুষ। হোটেল কর্তৃপক্ষ ও এলাকার অন্যান্য ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি তুলেছেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনায় জড়িত মূল অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেফতার করার লক্ষ্যে একাধিক জায়গায় হানা দেওয়া হচ্ছে। তদন্তে উঠে আসছে আরও তথ্য, যা পরবর্তী সময়ে অপহরণের পেছনের আসল উদ্দেশ্য স্পষ্ট করবে বলে আশাবাদী পুলিশ প্রশাসন।