ধসে গেল ৭৫ ফুট জগদ্ধাত্রী মণ্ডপ, আহত ৬

চন্দননগর: প্রবল দমকা হাওয়া ও ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’-র প্রভাবে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা কাঁপিয়ে দিল হুগলির চন্দননগরকে। কানাইলাল পল্লী সর্বজনীনের “বিশ্বের সবচেয়ে বড় জগদ্ধাত্রী” পুজোর (Jagaddhatri Puja) মণ্ডপ মুহূর্তে ধসে পড়ে। ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৬ জন দর্শনার্থী, যাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

Advertisements

চন্দননগরের এই পুজো এ বছর বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল — প্রায় ৭৫ ফুট উঁচু ফাইবারের জগদ্ধাত্রী প্রতিমা ও রেজিন কাঠামো নিয়ে। পুজো কমিটির দাবি, তারা প্রশাসনের সমস্ত নির্দেশ ও অনুমতি মেনেই মণ্ডপ তৈরি করেছিল। কিন্তু প্রবল দমকা হাওয়ায় সেই বিশাল ফাইবার স্ট্রাকচার উলটে গিয়ে মণ্ডপের উপর পড়ে যায়। ঘটনার সময় মণ্ডপে ছিলেন বিচারক ও বহু দর্শনার্থী।

   

দুর্ঘটনার পর মুহূর্তের মধ্যেই এলাকাজুড়ে হাহাকার পড়ে যায়। উদ্ধারকাজ শুরু করেন পুলিশ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা। আহতদের দ্রুত চন্দননগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, কেউ চাপা পড়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কানাইলাল পল্লী সর্বজনীনের সম্পাদক মনোজ বর্মন জানান, “আমরা চন্দননগরে ইতিহাস গড়তে চেয়েছিলাম— বিশ্বের সবচেয়ে বড় জগদ্ধাত্রী প্রতিমা তৈরি করে। কিন্তু প্রকৃতির শক্তির কাছে হার মানতে হলো। প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই কাজ করা হয়েছিল, কিন্তু প্রবল হাওয়ায় সবকিছু মুহূর্তে শেষ।”

এই দুর্ঘটনাকে ঘিরে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে প্যান্ডেল নির্মাণে নিরাপত্তা মান এবং প্রশাসনিক পর্যবেক্ষণের ঘাটতি নিয়ে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অতিরিক্ত উচ্চতার মণ্ডপে এমন দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল, তবুও পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

Advertisements

দমকল, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজে নেমেছেন। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও তৎপরতা দেখা গেছে। মুখ্যসচিবের নির্দেশে মণ্ডপ এলাকার চারপাশ ঘিরে দেওয়া হয়েছে এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে যাতে আরও বিপদ না ঘটে।

দত্তপুকুরের শিল্পীরা ফাইবার কাস্টিংয়ের মাধ্যমে এই প্রতিমাটি তৈরি করেছিলেন। ১৩ ফুট মৃন্ময়ী জগদ্ধাত্রী প্রতিমার উপরে ছিল বিশাল ফাইবার কাঠামো, যা লোহার ফ্রেমে আটকানো ছিল। দমকা হাওয়ায় সেই ফ্রেমের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পড়ে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী দিনে উৎসব আয়োজনের ক্ষেত্রে ঝড়-প্রবণ সময় ও কাঠামোগত নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, উৎসব আনন্দের হলেও, নিরাপত্তা অবহেলা মানেই বিপর্যয়।