পূর্ব মেদিনীপুর: উপকূলে আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় মন্থা (Cyclone Montha), আর তার প্রভাবে তীব্র ঝড় ও বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূল এলাকা। মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া ঝড়ো হাওয়া ও অঝোর বৃষ্টিতে জেলার বহু এলাকায় জল জমে গিয়েছে, বন্ধ হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে কয়েকটি গ্রামে। জেলার ২৫টি ব্লককে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী, মাটির ঘরে বসবাসকারী মানুষদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই হালদিয়া, নন্দীগ্রাম, খেজুরি, রামনগর, কাঁথি–১ ও কাঁথি–২ ব্লকগুলিতে বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। এই অঞ্চলগুলি নিম্নভূমি হওয়ায়, অতিবৃষ্টির ফলে জলস্তর দ্রুত বাড়ছে।
বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর ও পঞ্চায়েত প্রশাসন সম্পূর্ণ প্রস্তুত, জানিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা শাসক। তিনি বলেন, “উপকূলের প্রতিটি ব্লকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে, উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করা হয়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।” ইতিমধ্যেই বহু পরিবারকে অস্থায়ী ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়েছে।
রাতভর বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার কারণে বহু গাছ উপড়ে পড়েছে, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। কিছু এলাকায় ঘরের চাল উড়ে গেছে বলে খবর মিলেছে। প্রশাসন জানিয়েছে, “কোনও অবস্থাতেই কেউ যেন বাড়ির বাইরে না বেরোয়।” নিম্নাঞ্চলে জল ঢুকে পড়ায় কিছু গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
পঞ্চায়েত স্তরেও জোরদার সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মাইকিং করে মানুষকে সজাগ থাকার বার্তা দিচ্ছেন। মাটির বাড়ি ও পুরনো ঘরে থাকা মানুষদের জন্য তৈরি করা হয়েছে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র। প্রশাসনের নির্দেশ, যত দ্রুত সম্ভব তারা যেন নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে যান।
হালদিয়া বন্দরের এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে জাহাজ চলাচলে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সমুদ্রের ঢেউ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক উঁচু, ফলে মাছ ধরার নৌকাগুলিকে উপকূলে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, “এই মুহূর্তে সমুদ্রে যাওয়া মানেই প্রাণ হাতে নেওয়া।”
জেলার বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগ জানিয়েছে, প্রতিটি ব্লকে মেডিক্যাল টিম মোতায়েন রয়েছে, উদ্ধারকারী নৌকা ও জরুরি খাদ্য মজুত রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রশাসনের তৎপরতায় কয়েকশো পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
নন্দীগ্রাম ও খেজুরির কিছু এলাকায় জল জমে ঘরবাড়ি ডুবে গেছে, রাস্তা দিয়ে চলাফেরা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে জেলার পুলিশ ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা উদ্ধারকাজে নেমেছেন। খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেই তারা গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দিচ্ছেন।
রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, “জেলার পরিস্থিতি ঘন ঘন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে সেনা বা এনডিআরএফ দলের সাহায্য নেওয়া হবে।” ঝড়ের কারণে বহু স্কুল-কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে প্রশাসনের অনুরোধ, যতটা সম্ভব বাড়িতেই থাকুন এবং অপ্রয়োজনীয় গুজবে কান দেবেন না।


